মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে উদযাপিত হয় উপমহাদেশের একমাত্র লাল বর্ণের জাগ্রত দুর্গা দেবীর পূজা।আর সেই কারনেই এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ ভক্তবৃন্দের সমাগম ঘটে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া তিনশ বছরের কাছাকাছি সময় ধরে ব্যতিক্রমী এই পূজার আয়োজন হয়ে আসছে। দেশের আর কোথাও লাল বর্ণের দেবী দুর্গার পূজা নেই।ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের পদচারণায় নিভৃত গ্রামটি হয়ে ওঠে কোলাহল মুখর। উপমহাদেশের মধ্যে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, ময়মনসিংসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভক্তরা এখানে ছুটে আসেন দেবী দর্শনের জন্য। মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে পাঁচগাঁও নামক স্থানে স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাসের বাড়িতে পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গা পূজা। সিলেট বিভাগ মতান্তরে দেশের অন্যতম একটি লাল দুর্গা মন্ডপ এটি।
জানা যায়, পূর্বপুরুষ সর্বানন্দ দাস আসামের শিবসাগরে মুন্সীপদে চাকরি করতেন। তিনি ছিলেন সাধক পুরুষ। একবার আসামের কামরুপ-কামাক্ষ্যা বাড়িতে গিয়ে পূজার জন্য পাঁচ বছরের একটি মেয়ে চাইলে স্থানীয় লোকজন তাকে একটি মেয়ে দেন। সর্বানন্দ দাস সেই মেয়েকে পূজা দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে মেয়েটির রং বদলে লাল হয়ে ওঠে। মেয়েটির মধ্যে স্বয়ং দেবী ভর করেন। মেয়েটি তখন সর্বানন্দ দাসকে বলে, তুমি আমার কাছে বর (আশীর্বাদ) চাও। আমি তোমাকে বর (আশীর্বাদ) দিব।সর্বানন্দ দাস তখন তার কাছে বর (আশীর্বাদ) চাইলেন। দেবী তখন নির্দেশ দিলেন পাঁচগাঁওয়ের প্রতিমার রঙ হবে লাল। সেই থেকে এখানে লাল বর্ণের মুর্ত্তির পূজা হয়ে আসছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, অন্য প্রতিমা থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। লাল বর্ণের দেবী মূর্তি দেশের আর কোথাও নেই। যে কারণে এই প্রতিমার কাছে ভক্তদের অনেক আশা-আকাংখা। প্রতি বছর পূজার সময় মহিষ, অগণিত হাঁস ও কবুতর বলি দেওয়া হয়ে থাকে। পূজার সময় বেশি ভিড় হয় সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর দিনে। প্রতিদিন অর্ধলক্ষাধিক মানুষ প্রতিমা দর্শনে আসা-যাওয়া করেন।
পূজা উদযাপন কমিটির পরিচালক সঞ্জয় দাস জানান, মূলতঃ এটি পারিবারিক পূজা। পূজা পরিচালনাকারীদের মধ্যে তিনি এখন ষষ্ঠ পুরুষ। তার পূর্বপুরুষ স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাস ধ্যানে বসে কুমারী পূজার মাধ্যমে লাল দুর্গার দর্শন পাওয়ার পর প্রতিবছর এখানে লাল দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।,
আপনার মতামত লিখুন :