★ ত্যাড়া লিটনের ইটভাটার এক কিলোমিটারের মধ্যে সাতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
★প্যান্ট যখন বানিয়েছি তাহলে জিপারের জায়গা রেখেছি: ত্যাড়া লিটন
★ছাত্রজনতার আন্দোলন ঠেকাতে আ`লীগের অন্যতম ডোনার
★নারী কেলেংকারিতে ছেড়েছিলেন এলাকা, আ`লীগের ছোঁয়ায় হয়ে উঠেন শিল্পপতি
শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা যুবলীগ ক্যাডার ত্যাড়া লিটনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। ফসলি জমিতে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে গড়ে তুলেন ইটভাটা। ইটভাটার কারণে গ্রামের কৃষি আবাদ ধংসের পথে। ভাটার এক কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও রয়েছে ঝুঁকিতে। ভাটা নিয়ে কেউ অভিযোগ তুললেই যুবলীগের এই ক্যাডার মামলার হুমকি দেন। খুনি হাসিনা পালানোর পরও অজানা প্রভাব খাটিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটার এক কিলোমিটারের মধ্যেই শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যোগিনী মুড়া উচ্চ বিদ্যালয়, যোগিনী মুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যোগিনীমুড়া চৌরাস্তা মোড় হাফেজীয়া মাদ্রাসা, মোবারকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোবারকপুর বাঁশতলা মোড়ে মহিলা মাদ্রাসা, আর মাত্র ৩শ মিটারের মধ্যেই ফসিহ উল উলুম দাখিল মাদ্রাসা, মসজিদে মামা শরিফা, খানকায়ে সিদ্দিকী দরবার। এসব প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে, আবার ঘনবসতিপূর্ণ এই গ্রামে ভাটাটির দূষণের কারণে জনসাধারণও ভূগছে নানান রোগে। কেউ প্রতিবাদ করলেই মামলা ও হয়রানির ভয় দেখান ফ্যাসিস্ট হাসিনার এই দোসর।
যোগিনীমুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুতফর রহমান বলেন, আগে কিছু বলতে গেলে আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে ধমক দিতেন। কারণ তিনি ছিলেন বিনাভোটের এমপি আতিকের বিশ্বস্ত ডোনার। পরবর্তীতে ছানু এমপি হলে তিনি ছানুর খালাতো ভাই হয়ে যান। আমি নামাজি মানুষ, নবীর সুন্নত দাঁড়ি রেখেছি অনেক আগে থেকেই। শিক্ষার্থীদের পক্ষে ভাটা নিয়ে কিছু বলতে গেলেই এই ত্যাড়া লিটন আমাকে জামায়াত ট্যাগ দিয়ে মামলার ভয় দেখাতো। পরিবেশ উপদেষ্টার কঠোর নিষেধাজ্ঞার পরও অবৈধ ইটভাটাটি গতবারও চালিয়েছে, এবারও শুরু করেছে। আমার শতশত শিক্ষার্থী এই ভাটার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভুগে। সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবারও চালু করছে ভাটাটি। আমার শিক্ষকরা খোঁজ নিতে গেলে, তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আ`লীগের সময় যেমন ছিলাম, এখনো তেমনি আছি কারণ আমার নাম ত্যাড়া লিটন। প্রশাসন আমার ম্যানেজ করা, কারণ আমি কি চুরি করে ভাটা চালু করেছি। বেশিকিছু বললে, মামলা করে দিব।
একই কথা জানান যোগিনীমুড়া গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলামসহ অন্তত ১৫জন কৃষক বলেন, এই ভাটার কারণে আগে ধান সব পুড়ে গেছিলো। যা কৃষি অফিস সব জানে। এরপর রাগ করে ধান বাদ দিয়ে কলা আবাদ করি। এখন কলাও হুমকিতে ভাটার কারণে। টিভিতে দেখি, সরকার ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছে। আর ত্যাড়া লিটনের ম্যানেজাররা বলে, আমরা ডিসি অফিসে লাখ লাখ টাকা কি স্বাদে দিয়ে আসলাম। আমাদের ভাটা দেদারসে চলবে, কারণ ডিসি অফিস ম্যানেজ করেছি। আপনারা বেশি কিছু বললে, মামলা দিয়ে দিবো।
স্থানীয় শিক্ষার্থী মুনছর আলী বলেন, এই ত্যাড়া লিটনের ভাটায় গতবছরও আওয়ামী লীগের নেতারা গোপনে মিটিং করেছে। কিন্তু তখন পুলিশিং ব্যবস্থা ভাঙা ছিলো, আমরা প্রশাসনকে অবগতও করেছিলাম। গত শীতে তার ভাটা থেকে মিটিং করে আওয়ামী লীগের লোকজন পাশ্ববর্তী আখের মামুদ বাজারের মোবারকপুরে সড়কে আগুন দেয়। যা হাসিনা পালানোর পর শেরপুর জেলায় প্রথম ঘটনা, পুলিশ এসে মূহুর্তেই পুরো এলাকা লাল হয়ে গেল। শহর হতে বিএনপির নেতাকর্মীরা এসে পরিদর্শন করে গেল। কিন্তু সেই ঘটনায় ভৌতিক কারণে কোন মামলা হয়নি। আওয়ামী লীগের ডোনার খ্যাত যুবলীগ ক্যাডার ত্যাড়া লিটনের ভাটা এবার সরগরম করে চালু করেছে। সরকার পতনের পরও তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। আমাদের আন্দোলন ঠেকাতে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের অন্যতম ডোনার। এবং তখন আমাদের আন্দোলন দমাতে এলাকায় নিয়মিত পুলিশ নিয়ে আসতেন আওয়ামী লীগের এই ক্যাডার। এখন কেউ অবৈধভাটা কিছু বললেই ত্যাড়া লিটন বলে, প্যান্ট যখন বানিয়েছি তাহলে জিপারের জায়গা রেখেছি।
পলাতক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সামান্য একজন বেকার যুবক যিনি নারী কেলেংকারী অভিযোগে গ্রাম ছাড়া হয়েছিলেন সেই ত্যাড়া লিটন আওয়ামী লীগকে ব্যানার বানিয়ে দ্রুত শিল্পপতি বনে গেছেন। আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে ভাগিয়ে নিতেন নানান জায়গা হতে অর্থ। আর আজ আমরা দলের নিবেদিত প্রাণ, তাই মামলা মাথায় নিয়ে ফেরারি হয়ে ঘুরছি। অথচ দলের সুদিনে শিল্পপতি বনে যাওয়া ত্যাড়া লিটন, দলের এই ক্রান্তিকালীন সময়ে আমাদের খোঁজও নিচ্ছে না। তবে আমাদের দলে এখনো গ্রুপিং আছে, সে কার সাথে যোগাযোগ রাখে, সেই গ্রুপটিও তার মতো বেঈমান। আমাদের সাথে থেকে কোটিপতি হয়ে আজ সব ভুলে গেছে এই নারীলোভী লিটন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ত্যাড়া লিটনের কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
স্থানীয় বিএনপি নেতা এটিএম বাবুল বলেন, আমি বর্তমানে অসুস্থ, শেরপুরের বাইরে আছি।
জুলাই যোদ্ধা ও রেড জুলাইয়ের শেরপুরের সদস্য সচিব সোহানুর রহমান বলেন, চব্বিশের আন্দোলনে এই আওয়ামী লীগের দোসরা যেভাবে আমাদের ভাই বোনদের উপর হামলা চালিয়েছে তা একমাত্র খুনির মনমানুষিকতা ছাড়া সম্ভব ছিলো না। আমার তিনজন সহযোদ্ধাকে চোখের সামনে হারিয়েছি এই হায়েনাদের হামলায়। রক্তের দাগ না শুকাতেই কিভাবে তারা এমন উন্মুক্ত থাকে। এই দোসরা উন্মুক্ত থাকলে যেকোনো সময় শেরপুরকে অস্থিতিশীল করতে পারে।
শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, চব্বিশের ছাত্রজনতার আন্দোলনের সময় তাদের উপর হামলায় যারা জড়িত ছিলেন তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

আপনার মতামত লিখুন :