মনজু বিজয় চৌধুরী,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি॥
একটা জাতি যখন নিঃশব্দে কাঁদে, ইতিহাস তখন গোপনে লিখে রাখে সব কিছু। জুলাই-আগস্টের সেই সময়টা যেন এক ভয়ের সময়। মানুষ কথা বলতে চেয়েছিল, প্রশ্ন তুলেছিল—আর তার জবাবে এসেছিল নির্যাতন, নিপীড়ন, এবং যন্ত্রণার গল্প।
গত ৪ আগস্ট ২০২৪ কি ঘটেছিল মৌলভীবাজারের। জুলাই আন্দোলনের এই স্রৈরাচার হাসিনা পতন গণঅভ্যুত্থানে যারা মৌলভীবাজার জেলায় প্রত্যক্ষ অবস্থান করে। যারা গুলির মুখে দাড়িয়ে,এই স্বৈরাচার হাসিনাকে,এই বাংলাদেশের থেকে বিতারিত করেছে এবং আওয়ামীলীগের ধূসরদের এই মৌলভীবাজার থেকে বিতারিত করেছে।
৪ আগস্ট রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা, কোর্ট রোড, সেন্ট্রাল রোড, শমশেরনগর রোড ও চাঁদনীঘাট এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও জনতার উপর হামলা চলছিল। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ৪ আগস্ট জেলা সদরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করে। এ সময় সাবেক দুই এমপির নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদেরকে বাধা দেয়। একপর্যায়ের হামলা চালিয়ে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়।
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গুলি চালানোর কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। যারা জীবন বাজি রেখে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ গ্রহণ করেছিল।
১৭ জুলাই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচিতে শহরের শাকুরা মার্কেটের সামনে ছাত্রলীগ পুলিশের সামনেই শিক্ষার্থীদের উপর লাটিসোঠা ও হকিস্টিক দিয়ে বেপরোয়া হামলা চালায়। আহত হন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। ১৮ জুলাই বিক্ষোভ মিছিল হলো, ৪ বার পুলিশ বাধা দেয় এবং ২ জনকে গ্রেফতার করে।
আন্দোলনে যুক্ত ৪ আগস্টের স্মৃতিচারণ করে আহত রাব্বি মিয়া বলেন ১৮ জুলাই সাকুড়া মার্কেটে আমলা হয়েছে। যে যুবলীগের যে সভাপতি ছিল তার নেতৃত্বে এবং ছাত্রলীগের সবাই ছিল। ১৮ জুলাই গুরুতর আহত হয়েছে ৫-৭ জন। এবং অনন্য মিলিয়ে ১৫ জন। আর ৪ আগষ্ট যে হামলা হয়েছে। সেটার মধ্যে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে। বাঁশ- লাঠি, রড দিয়ে পিটিয়েছে। ৯০-৯৫ জন আহত হয়েছে। সারা জেলায় ১০০ থেকে ১২০ জনের মতো হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ৪ আগস্টের তানজিয়া শিশির বলেন জুলাই -আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ব্যানার নিয়ে আমরা যখন মৌলভীবাজার জেলায় আন্দোলন করতে লামি। ১৬ জুলাই আমাদের উপর সর্ব প্রথম হামলা করা হয় মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের মধ্যে। তারপর ১৭ জুলাই ১৮ জুলাই এব ৪ আগস্ট আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে আমাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা করা হয়। তারপর বিকালের দিকে প্রকাশ দেশিয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর। তারপর গুলি চালানো হয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জনতার গুলিতে আহত তারেক মিয়া স্মৃতিচারন করে বলেন, ২০২৪ সালের ৪ আগষ্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের দাবীতে ছাত্র জনতা মিছিল নিয়ে মৌলভীবাজার চাঁদনীঘাট ব্রিজ থেকে শহরে প্রবেশের চেষ্টা করে। ছাত্রদের সাথে যোগ দেই স্বৈরাচার সরকার পতনের জন্য। যখন আমার ব্রিজের উপর উঠি তখন পুলিশ আমাদের উপর টি আর গ্যাস মারে। আমাদের মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তখন আমি চোখে হাত দেই আর তখন পুলিশ ছিটা গুলি শুরু পড়ছে। ২৬/২৭ টি গুলি লেগে রক্ত ঝরতে থাকে। এখনও শরীরে দাগ আছে।
মৌলভীবাজার আন্দোলনে অংশ নেয়া ফাহাদ আলম বলেন, আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিউজ কাভার করেছেন।এবং সঠিক তথ্য গুলো তুলে ধরেছেন।এবং তুলে ধরতে গিয়ে যাদের উপর আক্রমণ হয়েছে, যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা জুলাই গনঅভ্যুত্থানে সঠিক তথ্য তুলে ধরেছেন।
৪ আগস্টকে কেন্দ্র করে একসাপ্তাহ আগেই নেয়া হয় পরিকল্পনা। যার কারণে ৩ আগস্ট রাতেই শহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে অবস্থান নেন প্রায় দেড়হাজার শিক্ষার্থী। যার পিছন থেকে সাহস আর ব্যাপক ভুমিকা রাখে।
উল্লেখযোগ্য ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে লাখ লাখ ছাত্র-জনতার ঢাকা ঘেরাও চলাকালে এবং গণভবনমুখী ছাত্র-জনতার উত্তাল স্রোতের মুখে শেখ হাসিনার ভারত পালিয়ে যাওয়া এবং সেই সাথে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের খবরে সারা দেশের মতো মৌলভীবাজারের মুহুর্তেই পাল্টে যায় শহরের চিরচেনা দৃশ্যপট। বৃষ্টিময় ওই দিনে পুরো শহরে লোকজন আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে।
আপনার মতামত লিখুন :