ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

নেত্রকোনায় তিন সাংবাদিকের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি বিএনপি নেতার

নেত্রকোণা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম

নেত্রকোনায় তিন সাংবাদিকের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি বিএনপি নেতার

ছবি বর্তমান বাংলাদেশ

নেত্রকোনায় সংবাদ প্রকাশের জেরে তিনজন সাংবাদিকের হাত কেটে নেয়ার হুমকির অভিযোগ উঠেছে কামরুজ্জামান চন্দন নামের এক বিএনপির নেতার  বিরুদ্ধে।

গত শুক্রবার বিকেলে মানববন্ধন করে তিনি এই হুমকি দেন। তাঁর বক্তব্যে হুমকির বিষয়টি ইতিমধ্যে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

অভিযুক্ত কামরুজ্জামান চন্দন মদন পৌর বিএনপি সভাপতি। আর হুমকির শিকার সাংবাদিকেরা হলেন- কলের কণ্ঠ প্রত্রিকার নেত্রকোনা আঞ্চলিক প্রতিনিধি মদন উপজেলা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজ আহম্মেদ (হৃদয়), আমার দেশ পত্রিকার মদন উপজেলা প্রতিনিধি এবং প্রেসক্লাবের সাহিত্য প্রচার সম্পাদক নিজাম উদ্দিন এবং যুগান্তরের উপজেলা প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাবের সদস্য তোফাজ্জল হোসেন ।


স্থানীয় বাসিন্দা, মদন পৌরসভা কার্যালয় ও উপজেলা প্রেসক্লাব সূত্রে জানা গেছে, মদন পৌর সভায় মদন-কেন্দুয়া সড়কের বৈশ্যপাড়া পল্লীবিদ্যুতের সাবস্টেশন থেকে ভাটিমনোহরপুর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার ৩৭০ মিটার সড়কটি ২০২৪ সালের জুনে নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে প্রায় ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘রাহাত এন্টারপ্রাইজ’। নিয়ম  অনুযায়ী সড়কের নির্মাণকাজ শেষ থেকে তিন বছরের ফিটনেস থাকার কথা। কিন্তু ওই বছরের জুলাই থেকে মদন পৌরসভার উদ্যোগে আইইউজিআইপি প্রকল্পের একই সড়কের প্রায় ১২০০ মিটার অংশ নির্মাণকাজ শুরু করার কার্যাদেশ দেয়া হয়। ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘কবির সিন্ডিকেট সেন্স’ নামের স্থানীয় একটি ঠিকাদারিকে চলতি বছরের ২৪ জুলাই কাজ শেষ করার কথা বলা হয়। কিন্তু নিদৃষ্ট সময়ে কাজ না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময় বাড়িয়ে সম্প্রতি কাজ শেষ করে। অভিযোগ রয়েছে নির্ধারিত মান ঠিক না রেখে কাজ শেষ করা হয়। এ নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা সংবাদ প্রকাশ করলে ক্ষেপে যান ঠিকাদারসহ স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী। গত বৃহস্পতিবার ঠিকাদারের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল রোমান তিন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এ ছাড়া সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার বিকেলে পৌরসভার দেওয়ানবাজার রোড এলাকায় ‘মদন পৌরবাসীর’ আয়োজনে তাঁরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। এ সময় সেখানে মদন পৌর  বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান চন্দন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাদাবাজির অভিযোগ তুলে বক্তব্যে দেন। তাঁর প্রায় দেড় মিনিটের বক্তব্যে তিনি ওই তিন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে বলেন- ‘চাঁদাবাজির চিন্তাভাবনা ছেড়ে দিয়ে তাঁদের ভালো হয়ে যেতে বলি। আমরা কিন্তু এ দেশে খুব একটা ভালো মানুষ না। আমরাও কিন্তু অনেক কিছু পারি। কিন্তু আমরা নিজেকে শিক্ষিত মনে করে, ভদ্র মনে করে ভালো হয়ে গেছি।  তাই আমরা হুশিয়ার করে দিতে চাই ভবিষ্যতে আর যদি এটা নিয়ে কিছু করা হয় প্রয়োজনে হাত কেটে দেওয়া হবে, হাত।’ এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা উপস্থিত মানববন্ধনকারীরা হাততালি দিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।  


ঘটনায় ওই তিন সাংবাদিক জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাঁরা বলছেন- অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির ঘটনা সাজিয়ে থানায় অভিযোগসহ মানববন্ধন করে হাত কেটে নেওয়ার হুকমি দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও আমার দেশ পত্রিকার নেত্রকোনা প্রতিনিধি মাহবুবুল কিবরিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এভাবে মানববন্ধন করে একজন বিএনপির নেতা প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের হাত কেটে নেওয়ার হুমকির দিতে পারেন না। বিষয়টি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আশা কির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখবে। একই সঙ্গে সড়কে দুর্নীতির ঘটনাটি দুদককে তদন্ত করার আহ্বান জানাই।’

জানতে চাইলে কামরুজ্জামান চন্দন আজ শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ‘রাস্তার কাজ হচ্ছিল সেখানে গিয়ে সাংবাদিকরা নাকি টাকা চেয়েছিল শুনেছি। নিউজ করায় অনেক মানুষ ক্ষেপে গিয়েছিল। যদি পৌর সভার চলমান প্রকল্পগুলো বাতি হয়ে যায় তবে তো সমস্যা। তাই মানুষের রাগ প্রশমিত করার জন্য আমি বক্তব্য দিতে গিয়ে হাত কেটে নেওয়ার বক্তব্যটি চলে এসেছে। এলাকার মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে এভাবে বলতে হয়েছে। এটা আমি রাগ বা মন থেকে বলিনি। ওরা (বাংবাদিকেরা) আমার ছোট ভাই। এখন বুঝতে পেরেছি এতটা বলা ঠিক হয়নি। আপনারা বিষয়টি সুন্দরভাবে সমাধান করবেন আশা করি।’

এ বিষয়ে মদন পৌরসভার প্রশাসক ও ইউএনও মো. অলিদুজ্জামান বলেন, এলজিইডি সড়কটি নির্মাণের সময় পৌরসভার লিখিত অনুমতি নেয়নি। প্রকল্পটি আগে থেকেই দেওয়া ছিল। সড়কটি নির্মাণ করার জন্য স্থানীয় লোকজন নিয়ে একাধিক মিটিং করেছি। সবার মতামতের ভিত্তিতে কাজ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!