মনজু বিজয় চৌধুরী,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি॥
গত বছরের ৪ আগষ্ট। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। ৪ আগষ্ট মৌলভীবাজার সদরের চাঁদনীঘাট থেকে স্বৈরাচার পতনের দাবীতে ছাত্র জনতার মিছিল শহরে প্রবেশ করতে গিয়ে চাঁদনীঘাট ব্রীজের উপর থেকে পুলিশের গুলিতে আহত হয় তারেক মিয়া ও রজব আলী। চাঁদনীঘাটের ব্রীজে আসতেই পুলিশের ট্যাংকার থেকে মুহুর্মুহু গুলি। শরীরে গুলি নিয়েই শারীরিক যন্ত্রণার সঙ্গে দৈনন্দিন কাজ করে যাচ্ছেন তারেক মিয়া ও বাবুর্চি রজব আলী । অভাবের কারণে নিতে পারছেন না উন্নত চিকিৎসা। থমকে গেছে তার স্বপ্ন, অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে পরিবারের ভবিষ্যৎ।
জানা যায়, সারা দেশের মতো ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে উত্তাল ছিল মৌলভীবাজার জেলায়। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক অফিসে আবেদন করে কোন ফলাফল আজও জানতে পারেনি। এখনো তার শরীরে বহন করছে অন্তত ৩৭ গুলি। মাসের পর মাস শরীরে গুলি বহন করে চলেছে সে। মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চলে আসে বাসায়।
মোহাম্মদ তারেক মিয়া পেশায় একজন ভ্যান রিক্সা দিয়ে কাপড় ফেরি করে বিক্রি করে। কুলাউড়ার বরমচালে তার গ্রামের বাড়ি। ব্যাবসার কারনে স্বপরিবার নিয়ে গুজারাই এলাকায় বসবাস করে।
অপরদিকে রজব আলী হোটেলের বাবুর্চি। চাঁদনীঘাট গুজাইয়ে স্বপরিবার নিয়ে থাকি। জুলাই বিপ্লবের ১ বছর পুর্ণ হতে চলেছে। কিন্তু কেউ নেয়নি তাদের খবর।
গুলিতে আহত তারেক মিয়া স্মৃতিচারন করে বলেন, আমি একজন ফেরিওয়ালা। ভ্যান রিক্স দিয়ে কাপড় বিক্রি করি। ২০২৪ সালের ৪ আগষ্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের দাবীতে ছাত্র জনতা মিছিল নিয়ে মৌলভীবাজার চাঁদনীঘাট ব্রিজ থেকে শহরে প্রবেশের চেষ্টা করে। আমিও ভ্যান রেখে ছাত্রদের সাথে যোগ দেই স্বৈরাচার সরকার পতনের জন্য। যখন আমার ব্রিজের উপর উঠি তখন পুলিশ আমাদের উপর টি আর গ্যাস মারে। আমাদের মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তখন আমি চোখে হাত দেই আর তখন পুলিশ ছিটা গুলি শুরু করছে। আমার সারা শরীরে, পিঠে এবং হাতে ২৬/২৭ টি গুলি লেগে রক্ত ঝরতে থাকে। চোখে ধরে ব্রিজের ওই পাশ থেকে এ পাশে চলে আসি। তারপর আমার আর কোনো জ্ঞান ছিলও না। সংসারে আমার স্ত্রী, ২ মেয়ে,আমার মা আছেন। টানটানির সংসার।
গুলিতে আহত রজব আলী বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার পতনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমি পেশায় বাবুর্চি। ছাত্রজনতার আন্দোলনের ৪ আগষ্ট মিছিলে যোগ দেই। চাঁদনীঘাট ব্রীজের উপর পুলিশ গুলি করে। অন্তত ৩৭ টি গুলি আমার সারা শরীরে লাগে। আমি পড়ে যাই। খবর পেয়ে আমার বোন আমাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে কোন কাজ করতে পারিনা।
গুলিতে আহত তারেকের মা হালিমা বেগম বলেন, ৪ আগষ্ট আন্দোলনে আমার ছেলে গিয়ে গুলি খাইছে। প্রায় ২৫/২৬ টা গুলি লাগে। ডাক্তার ২ টা গুলি বের করেছেন। আর বাকি গুলি তার শরীরে রয়েছে। বাকি গুলি শরীরে থাকার ফলে রাতে ঘুমাতে পারে না যতœনায় ছটফট করে।
টাকার কারণে চিকিৎসা করা হয় নাই। কেউ পাশে দাঁড়ায়নি,কেউ খবরও নেয় না। সরকার কাছে আবেদন আমাদের দিকে একটু চাইতে।
রজব আলীর স্ত্রীর বলেন, গুলি লেগেছে শুনার পর আমরা দৌড়ে গেছি। যাওয়ার পর দেখি ৩৭ টা গুলি লেগেছে। হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করেছি। ডাক্তার বলছেন এক্স করাতে। কিন্তু আমরা করাতে পারি নাই টাকার অভাবে। বর্তমানে শরীরে এখনও গুলি আছে। অসুস্থ মানুষ কোনো রুজি রোজগার করতে পারেন না। জরাজীর্ণ টিনের ঘরে পড়ে আছে আমরা।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো: ইসরাইল হোসেন বলেন আমাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ও অনেক কে সাহায্য করা হয়েছে। যদি তারা আহত হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের সাহায্য করা হবে। কি না.। যদি এক মাস আগে করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তারা সাহায্য পাবেন।জেলা প্রশাসন থেকে সাহায্য করবে।
আপনার মতামত লিখুন :