জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ:
নওগাঁর আত্রাই উপজেলা বিএনপির ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দিয়েছে জেলা বিএনপি। কমিটিতে সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে স্থান পেয়েছে কৃষক দল থেকে বহিস্কৃত আলাউদ্দিন আলী (আলা) নামে এক ব্যক্তি। এরপর শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
গত ৩১জুলাই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব এর যৌথ স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে ১০১ সদস্যের ওই কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটিতে চার নং সহ-সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে আত্রাই উপজেলা কৃষক দলের সদস্য থেকে বহিষ্কার করা আলাউদ্দিন আলী (আলা) কে।
আর এ কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন দলটির দুর্দিনে রাজপথে থাকা অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীরা এমন অভিযোগ স্থানীয় নেতাকর্মীদের।
তারা বলছেন, এই কমিটি মনগড়াভাবে করা হয়েছে। যেই কমিটিতে দলের দুর্দিনে রাজপথে থাকা অনেক নির্যাতন অত্যাচার সহ্য করা ত্যাগী নেতাকর্মীরা স্থান পায় নি।
অন্যদিকে দলের সাথে ১৭ বছর যুক্ত থাকার কারণেই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন বলে দাবি করেন আলাউদ্দিন।
অপরদিকে বহিষ্কারের বিষয়টি জানা ছিল না বলে দাবি করছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
জানা যায়, গত ১৫ জুলাই বাংলাদেশ কৃষক দলের নওগাঁ জেলা কমিটির সদস্য সচিব এটিএম ফিরোজ দুলু`র স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে আলাউদ্দিনকে উপজেলা কৃষক দলের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেখানে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় অসাংগঠনিক কার্যক্রমে লিপ্ত থাকা সহ রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণের সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে বহিষ্কারের পরও বিএনপির উপজেলা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। অনেকে ক্ষোভ নিয়ে বলছেন বিভিন্ন অভিযোগে বহিষ্কৃত ব্যক্তি কিভাবে দলে স্থান পায়? তাও আবার সরাসরি সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। যে ব্যক্তি গত দুই সপ্তাহ আগে বহিষ্কার হয়, সেই ব্যক্তি দলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্থান পেলে অন্য নেতাকর্মীদের দলের প্রতি খারাপ মনোভাব সৃষ্টি হবে।
আবার অনেকে কৌতুহলবশত বলছেন, কৃষকদল থেকে বহিষ্কার হয়ে তার যেনো কপাল খুলেছে। হয়তোবা এখানে কোন স্বার্থের বিনিময়ে পদ পেয়েছে। নয়তো বিভিন্ন অভিযোগে বহিষ্কার হওয়া একজন ব্যক্তি কিভাবে ১৫ দিন অতিবাহিত না হতেই সহ-সাধারণ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ পায়?
জানতে চাইলে সহ-সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন আলাউদ্দিন আলী (আলা)। তিনি প্রথমে
কৃষকদলের আহ্বায়ক ছিলেন বলে দাবি করেন। এরপর বহিষ্কারের কারণ জানতে চাইলে সুর উল্টো করে তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমাকে না জানিয়ে ওরা কৃষক দলের সদস্য করে রাখছিল। কিন্তু আমি কৃষক দল করবো না ওদেরকে বলেছিলাম। তাই অব্যহতি লিখতে গিয়ে ভুল করে বহিষ্কার লিখেছে। তাদের সংশোধন করার কথা ছিল। পরে সংশোধন করে দিতে চেয়েছিল। এরপর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি একসময় বলেন, কৃষক দলের সদস্য সচিবের সাথে আমার একটু মনোমালিন্য চলছিল। আমি চিঠির জবাব দিয়েছি, তারা অব্যাহতি না বহিষ্কার করেছে সেটা আমার জানা নেই। এছাড়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা কমিটি বহিষ্কার করতে পারেনা।
আর আমি থানা কমিটি হওয়ার আগে থেকে ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি। তাই আমি আমার দলীয় কর্মকান্ডের জন্য উপজেলা বিএনপির কমিটিতে স্থান পেয়েছি। ১৭ বছর রাজপথে থেকে লড়াই সংগ্রাম করেছি। মারপিটের শিকার হয়েছি।
জানতে চাইলে জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব এটিএম ফিরোজ দুলু মুঠোফোনে বলেন, কৃষকদল অত্যন্ত ঐক্য ও সুসংগঠিত একটি দল। ব্যক্তিগত আক্রোশ ও শত্রুতা রাজনীতিতে চলে না। অসাংগঠনিক কার্যকলাপ করায় আলাউদ্দিনকে প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়ছিল। নোটিশের মৌখিক বা লিখিত কোন জবাব সে দেয়নি। এই কারণে নিয়মঅনুযায়ী তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর কারণ দর্শানোর বিষয়টি উপজেলা বিএনপির নেতাদের জানানো হয়ছিল। সব কিছু বিবেচনা করে আলাউদ্দিনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন তার বিষয়ে করণীয় উপজেলা বিএনপি ঠিক করবে।
জানতে চাইলে আত্রাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তাসলিম উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, আলাউদ্দিন আলী একটা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন, সেই হিসেবে তাকে উপজেলা কমিটিতে রাখা হয়েছে। আমরা তার বহিষ্কারের বিষয়টি জানতাম না। বা আমাদের জানানো হয় নি। কমিটি হওয়ার পরে জানতে পারলাম। যেহেতু তাকে কৃষকদলের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং তার বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে, তাই এখন আমরা উপজেলা বিএনপি আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নিবো এবং জেলা বিএনপিকে বিষয়টি অবগত করবো। তারপর দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক করণীয় ঠিক করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :