ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

বিদেশ পাঠানোর নামে কোটি টাকার প্রতারণা:কয়েকটি পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৭:৩৪ পিএম

বিদেশ পাঠানোর নামে কোটি টাকার প্রতারণা:কয়েকটি পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।

 মনজু বিজয় চৌধুরী, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
 

বিদেশ পাঠানোর প্রলোভনে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন মৌলভীবাজার জেলার একাধিক ব্যক্তি। কানাডা, আমেরিকা ও ইউরোপে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় পাঠানোর কথা বলে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র ৯ জন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোট ১ কোটি ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। শুধু অর্থ নয়, প্রতারিত ব্যক্তিদের পাসপোর্টও আত্মসাৎ করেছে প্রতারকরা। ভিটে মাটি বিক্রি করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউরোপ যাওয়া স্বপ্ন দেখে নি:স্ব হয়ে দিশাহারা ভোক্তভুগীরা। শুধু নি:স্ব নয় প্রতারক চক্র তাদের পাসপোর্ট  আটকে রাখায় পড়েছেন বিপাকে। ভুক্তভোগীদের দাবী, প্রশাসন দ্রুত হস্তক্ষেপ করে চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে তাদের পাসপোর্ট ও অর্থ উদ্ধার করুক, যাতে করে তারা পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন এবং স্বপ্নপূরণের পথ খুঁজে পান।
চুক্তিপত্র ও প্রমাণপত্র থেকে জানা গেছে, প্রতারক চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা থানার কামুসেনা গ্রামের ফাতেমা আক্তার জেসমিন তার স্বামী কবির আহমদ রুকন (মোহাম্মদপুর, সিলেট) ফাতেমার বাবা সামসুল আলী, মা রিনা বেগম ও মৌলভীবাজার শাহবন্দরের মামা নহেল আহমদ। এদিকে গুঞ্জন উঠেছে প্রতারক চক্রটি এখন দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছে। বেশ কয়েকজন সদস্য নাকি বিদেশ পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে প্রতারিত ব্যক্তিরা ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এবং প্রতারকদের দেওয়া কাগজপত্র নিয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
এই চক্রটি কৌশলে মৌলভীবাজারের সাকের আহমদ, রাহিন আহমদ, সাহিম আহমদ, শাহীন মিয়া, আব্দুল মালিক, সাহেদ মিয়া এবং সুনামগঞ্জ জেলার বাবুল মিয়া ও সুরুক মিয়ার কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা বিদেশ পাঠানোর নামে নেয়। তারা আশ্বস্ত করেছিল খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইউরোপ, কানাডা ও আমেরিকায় বৈধ ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় পাঠানো হবে।
ভুক্তভোগীরা মোহাম্মদ রাহিম আহমদ জানান,আমি কানাডার জন্য টাকা দিছিলাম ফাতেমা আক্তার জেসমিন, তার মামা শাবন্দর এলাকার নুয়েল আহমদের নিকট। এসময় তার আব্বা-আম্মু সবাই আমার বাড়িতে এসে বলেন, তার ভাই বিদেশে থাকেন। তার মাধ্যমে আমারে কানাডা ২ মাস ১০ দিনের মধ্যে ওয়ার্ক পারর্মিট বিসায় পঠাবেন। তদের কথা মতো আমি ১২ লাখ টাকা দেই। তারপর আমি ২ মাস ১০ দিন অপেক্ষা করে তার কাছে যাই। তাদের সাথে দেখা করলে তারা টালবাহানা করে। পরে বুঝতে পারি সবাই আমার সঙ্গে প্রতারনা করছে। আমার টাকা ফেরৎ চাইলে নানা অজুহাত দেখায়। আমার কাছে তাদের চেক ও স্টাম্প সহ সব ধরনের প্রামাণ আছে। 
সাকের আহমদের মা লুৎফা বেগম বলেন, আমার ছেলেরে ইউরোপ পাঠানোর কথা বলে ৪ জন মিলে ১০ লাখ টাকা নেয়। আমি জায়গা জমিন বিক্রি করে টাকা দেই। আমি ফকির হয়ে টাকা গুন দেই আমার বাচ্চা কে বিদেশে পাঠানোর জন্য। এখন আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই সরকারের কাছে। 
সায়েম খান বলেন, আমি ২১ লাখ টাকা দিয়েছি।টাকাতো ফেরৎ দিচ্ছেনা। আমার পাসপোর্ট তারা আটকে রেখেছে। তাদের ফোন দিলে ফোন রিসিভ করেনা। আমার মতো আমাদের গ্রামের ১০ জন  মানুষ টাকা দিয়েছে। কিন্তু কারো হয় নাই। গত ৭-৮ মাস ধরে আমারে টালবাহানা করছে। আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।  
শাহিন আহমদ বলেন, আমার কাছ একি ভাবে ১০ লাখ  টাকা নিয়েছে। আমার স্ত্রী বাচ্চা করে দেওয়ার কথা বলে। আমাদের আজ কাল বলে ঘুরাছে। এই ভাবে শাহীন আহমদের নিকট থেকে ১৩ লাখ ও রাহিম আহমদের নিকট থেকে ১২ লাখ টাকা নেয়।
এলাকাব রাখা পীরের বাড়ির অদুদ মিয়া, জুয়েল মিয়া, নাছিমা বেগম বলেন, আমাদের এলাকা থেকে বিদেশ নেওয়ার কথা বলে ১০/১২ মানুষ টাকা নিয়েছে। আজ পযন্ত কাউকেই বিদেশ নেয় নাই। ওদের সাথে প্রতারনা করছে। আমাদের জানা মতে ৮/১০ জনের নিকট থেকে ১ কোটি ২০  লাখ টাকা নিয়েছে। ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে ওদেরে পাঠানোর কথা থাকলেও এখন ১ বছর হয়ে গেলেও কোনো কিছু করতে পারছেনা। কোটি টাকা প্রতারনা করে হাতিয়ে নিয়েছে।

বিদেশ পাঠানোর কথা বলে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ব্যাপারে ফাতেমা আক্তার জেসমিন তার স্বামী কবির আহমদ এর মুটোফোনে যোগাযোগে করলে জানতে চাইলে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, তাদের কাগজ পত্র ঠিক মতো দেয় নাই। সব ডকুমেন্ট যদি না দেয় তাহলে তো বিসা করা যাবে না। তাই বিসা হয়নি। তবে তাদের কিছু টাকা দিয়ে দিয়েছি। আর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন উঠেনা। পালিয়ে যাবে কোথায়। কোনো ডিসিশন না হওয়া পযন্ত কেন পালিয়ে যাব। 
মৌলভীবাজার জজ কোর্টের এডভোকেট নাসিম আহমেদ বাপ্পি বলেন, শাহিন আহমদ সহ ৫ জনের কাছ থেকে নুয়েল আহমেদ এবং আরেক জন উনাদের কে যুক্তরাষ্ট্র সহ বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে প্রায় কোটি টাকা নিয়েছে।  টাকা পয়সা নেওয়া পর তাদের বিদেশের ব্যাপারে কোনো কাজ করে নাই। তাদের ৫ জনকে ৫ টা চেক দিয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে তারা যোগাযোগ করেছে। বিসা করতে ন পারায় তখন তারা টাকা না দিয়ে, চেক প্রদান করে। চেকটা যখন ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে চেকটা বাউন্স হয়। বাউন্স হওয়ার পরে আইনি প্রক্রিয়া অংশ হিসেবে তারা আমাদের কাছে যোগাযোগ করেছে। আমি নোটিশ দাতার পক্ষ থেকে নোটিশ গ্রহিতাকে লিগেল নোটিশ প্রেরন করেছি এবং লিগেল নোটিশের একটা সময় সীমা আছে ৩০ দিন। ঐই সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে আমরা আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আদালতে যাব। এই ধরনের প্রতারক চক্র সহজ সরল মানুষদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তারা মানুষের সহায় সম্পদি লুট করে।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!