জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ:
দীর্ঘ ১৫ বছর আগামীকাল সোমবার নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ১১ উপজেলা ও তিনটি পৌর কমিটির ১ হাজার ৪১৪জন কাউন্সিলরের ভোটে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
এদিকে এই সম্মেলনের আগের দিন রোববার (১০ আগস্ট) দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মেলনের কাউন্সিলর বা ভোটার তালিকাকে ‘বিতর্কিত’ উল্লেখ করে সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম বেলাল।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ন আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সম্মেলনের কাউন্সিলরদের যে তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে সেটি বিতর্কিত তালিকা। ওই তালিকায় নেতাকর্মীদের সঠিক মূল্যায়নের অভাব রয়েছে। কারণ, যারা দীর্ঘদিনের ত্যাগী, অনেক মামলা-মোকদ্দমায় আসামি হয়েছেন এবং দলের প্রতিটি কর্মসূচিতে থাকেন, এমন অনেক নেতার নাম কাউন্সিলর তালিকায় নেই। অন্যদিকে যারা দুর্দিনে দলের মিছিল ও সভায় আসেননি, তাদের নাম কাউন্সিলর তালিকা রাখা হয়েছে। এ ধরণের বিতর্কিত কাউন্সিলর তালিকার ভিত্তিতে নেতা নির্বাচিত হলে প্রকৃত ত্যাগী ও কর্মীবান্ধব নেতৃত্ব গঠন করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, জেলার ১১টি উপজেলা ও তিনটি পৌর কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা জেলা বিএনপির সম্মেলনে কাউন্সিলর হিসেবে ভোট প্রদান করবেন। এই সম্মেলনে কোনো কোনো প্রার্থী নিজেদের জেতার পথ সুগম করার জন্য সম্মেলনের কাউন্সিলরদের তালিকায় পছন্দের লোকদের নাম রেখেছেন। সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছ থেকে পাওয়া ভোটার বা কাউন্সিলর তালিকা হাতে পাওয়া পর দেখা গেছে, গত ১৬ বছরে দলের জন্য মামলায় জড়ানো বহু ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাদের বাদ দিয়ে উপজেলা ও পৌর কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে। উপজেলা ও পৌর বিএনপির সর্বশেষ কমিটিতে আহ্বায়ক ও যুগ্ন-আহ্বায়কসহ বিভিন্ন গরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এমন নেতাদের জেলা বিএনপির সম্মেলনের কাউন্সিলরদের তালিকায় নাম রাখা হয়নি। দীর্ঘ দিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত কর্মীদের বাদ দিয়ে দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এবং বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এমন লোকদের কমিটিগুলোতে স্থান দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিতর্কিত কাউন্সিলর তালিকার বিষয়ে জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির প্রধান সমন্বয়কারীর কাছে অভিযোগ করার পরেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ পরিস্থিতিতে বিতর্কিত কাউন্সিলর বা ভোটার তালিকার অধীনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আমিনুল ইসলাম বলেন, দলের সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কিংবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব উপজেলা ও পৌর কমিটি অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। সেক্ষেত্রে উপজেলা ও পৌর বিএনপির যেসব বিতর্কিত কমিটি গঠন করা হয়েছে এর দায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব সম্মেলনে নিজেদের জেতার পথ সুগম করতে উপজেলা ও পৌর বিএনপিতে পকেট কমিটি গঠন করেছেন।
বিতর্কিত কাউন্সিলর তালিকা গঠনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য সচিব ও দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বায়েজিদ হোসেন পলাশ বলেন, ১১টি উপজেলা ও তিনটি পৌর কমিটি দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৪টি ইউনিটের নিয়ামতপুর ও মান্দা উপজেলা কমিটি ছাড়া বাকি ১২টি কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে সাভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। পরবর্তীতে নির্বাচিত সভাপতি, সাধারণ সম্পদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকেরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে জেলা কমিটির কাছে তালিকা পাঠিয়েছে। আমরা সেই কমিটি অনুমোদন দিয়েছি। এখানে আমাদের নিজের লোককে কমিটিতে রাখার কোনো সুযোগ নেই। আমিনুল ইসলাম বেলাল নিজেই একটি ইউনিট গঠনে দায়িত্বে ছিলেন। উনিও নির্বাচনের মাধ্যমে ওই ইউনিটে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। পরবর্তীতে নির্বাচিত নেতারা ওই ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেছেন।’
নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাকে।
নওগাঁ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও সম্মেলন পরিচালনা কমিটির সদস্য শেখ রেজাউল ইসলাম বলেন, সভাপতি পদে আটজন, সাধারণ সম্পাদক পদে চারজন এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের দুটি পদের জন্য আটজন মনোনয়নপত্র তুলেছেন। সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে এই তিনটি পদে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। নওগাঁ কনভেশন সেন্টারে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবেন। সম্মেলন সফল করার জন্য ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :