তিস্তাপারের মানুষ বছরের পর বছর নদীভাঙন, দারিদ্র্য ও পানিশূন্যতার অভিশাপে জর্জরিত। কৃষি, জীবিকা ও বসতভিটা হারিয়ে তারা আজ বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ক্লান্ত। সেই তিস্তাপারের আহাজারি এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে গড়ে উঠেছে এক জাতীয় জাগরণ।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ক্যাম্পাসে রংপুর বিভাগ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা এই দাবিতে শপথ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী হাতে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে এক কণ্ঠে উচ্চারণ করেন
তিস্তা বাঁচাও, উত্তরবঙ্গ বাঁচাও, বাংলাদেশ বাঁচাও।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মো. ইয়াছির আরাফাত, এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রায়হান কবির।
সভাপতি ইয়াছির আরাফাত বলেন,
তিস্তাপারের মানুষ বছরের পর বছর রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির অপেক্ষায় আছে। তারা শুধু পানি নয়, চায় বেঁচে থাকার অধিকার। এখনই সময় দৃঢ় কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের। তিস্তাপারের কান্না আজ গোটা জাতির কান্না। তরুণ প্রজন্ম এই আন্দোলনের নেতৃত্ব নিচ্ছে, কারণ তিস্তা বাঁচানো মানে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বাঁচানো।
বিশেষ অতিথি ও সংগঠনের সহসম্পাদক তানভীর আনাম বলেন,
ভাঙন, ক্ষুধা ও বেকারত্বে তিস্তাপারের মানুষ আজ দিশাহারা। অথচ এই নদী একসময় ছিল তাদের জীবনের উৎস।
ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী শফিউল্লাহ বলেন,
আন্তর্জাতিক পানিবণ্টন চুক্তি উপেক্ষা করে ভারত একতরফাভাবে তিস্তায় পানি প্রত্যাহার করছে। এটি শুধু অবিচার নয়, মানবতারও অপমান।”
আরেক শিক্ষার্থী মেহরাব হোসেন বলেন,
স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি সরকার তিস্তা নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন করেনি। আমরা বিশ্বাস করি,এই প্রজন্মই তিস্তা মুক্তির ইতিহাস লিখবে।
বক্তারা আরও বলেন, শুকনো মৌসুমে তিস্তা আজ মৃতপ্রায়, আর বর্ষায় বন্যার থাবায় ভাঙে ঘরবাড়ি ও স্বপ্ন। তবুও মানুষ আশায় বেঁচে আছে—কোনো একদিন তিস্তা আবার বইবে, প্রাণ ফিরবে উত্তরে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে প্রায় ২১ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। কৃষি উৎপাদন বাড়বে, ভাঙন রোধ হবে এবং উত্তরবঙ্গের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হবে।

আপনার মতামত লিখুন :