ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

গাজার অসহায় মানুষের পাশে বাংলাদেশি ৪ তরুণ

ময়মনসিংহ ব্যুরো:

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০৮:৩৯ পিএম

গাজার অসহায় মানুষের পাশে বাংলাদেশি ৪ তরুণ

ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো ময়মনসিংহের ভালুকার তরুণরা।

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি হামলায় প্রতিদিনই নিহত হচ্ছে নিরীহ মানুষ, আর খাদ্যসংকটে দিন কাটাচ্ছে জীবিতরা। বিশ্ব যখন এই মানবিক বিপর্যয়ের মুখে নীরব দর্শক, তখন ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের ডুবালিয়াপাড়া এলাকার চার তরুণ দাঁড়িয়েছেন ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে। পেশায় ভিন্ন হলেও মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে তারা গড়ে তুলেছেন এক অনন্য উদ্যোগ।

ওই চার তরুণ হলেন- মো. আশিক, মো. রাকিব, মো. দেলোয়ার সরকার ও মো. পলাশ।

এই কার্যক্রম শুরু হয় ফ্রিল্যান্সার মো. আশিকের হাত ধরে। ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে গাজার এক তরুণের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি প্রথমে যাচাইয়ের জন্য ৫ হাজার টাকা পাঠান। ভিডিও কলে নিশ্চিত হয়ে দেখেন, অর্থ সঠিকভাবে খাদ্য কেনায় ব্যয় হয়েছে। এই স্বচ্ছতা ও আবেগ তাকে এবং তার বন্ধুদের আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।

পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে সাত-আট ধাপে প্রায় ২০ লাখ টাকা গাজায় পাঠান তারা। এই অর্থ দিয়ে গম, সবজি, রুটি, তেল, লবণ, আলু, পেঁয়াজ ও পানি সংগ্রহ করে খান ইউনিস এলাকায় বিতরণ করা হয়। এতে সাময়িক হলেও ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া সম্ভব হয়।


গাজার স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের প্রধান আব্দুল্লাহ ও তার টিম সহায়তা বিতরণ করেন। ভিডিও কল, ছবি ও বার্তার মাধ্যমে প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতার প্রমাণ দেন তারা। এমনকি আব্দুল্লাহ আশিকের ছবি দিয়ে ব্যানার তৈরি করে সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এক পর্যায়ে আব্দুল্লাহর মায়ের সঙ্গেও ভিডিও কলে কথা বলেন আশিক, যা ছিল অত্যন্ত আবেগঘন মুহূর্ত।

ফ্রিল্যান্সার মো. আশিক বলেন, একদিন ইনস্টাগ্রামে ভিডিওতে দেখি গাজার এক ভাই অনুরোধ করছে ‘আমাদের খেয়ে বাঁচতে দিন, সাহায্য করুন।’ তখনই তার সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং ৫ হাজার টাকা পাঠাই। পরে অনেকের সহযোগিতা নিয়ে কাজের পরিধি বড় করি। আমরা যতদিন পারি গাজার মানুষের পাশে থাকব।

আরেক তরুণ মো. রাকিব বলেন, এক সময় আমরা সহায়তা পাঠানো বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবলেও, গাজার মানুষের আবেদনে আর পারিনি। যতদিন সম্ভব আমরা সহযোগিতা চালিয়ে যাবো। সমাজের বিত্তবানদেরও আহ্বান জানান পাশে দাঁড়ানোর।

জানা গেছে, বর্তমানে তারা স্থানীয় বাজার ও দোকানপাট থেকেও অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছেন। ইতোমধ্যে আরও কয়েকজন তরুণ এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছেন।

এদিকে তাদের এই অনন্য উদ্যোগ এখন এলাকার তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। তারা আশা করছেন, স্থানীয় ও প্রবাসী সবাই একত্রিত হলে গাজার নিরীহ মানুষের মুখে আরও বহুবার খাবার তুলে দেওয়া সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, অবরুদ্ধ গাজাবাসীদের জন্য ভালুকার ছেলেরা সহযোগিতা পাঠাচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি মানবিক উদ্যোগ।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!