বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ ভাষা আন্দোলনে জীবন দিয়েছে, স্বায়ত্তশাসন, গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০’র ছাত্র আন্দোলন এবং এই ২৪’র জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন আন্দোলনে অনেকে জীবন দিয়েছে। এত জীবন দেয়ার পর এখনো অসঙ্গতি নিয়ে আলোচনা হয়, এটা কেন হবে?
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আর কত জীবন দেবে এদেশের মানুষ, আর কত লড়াই করবে এদেশের মানুষ। মানুষ প্রাইমারি স্কুল থেকে হাইস্কুলে উঠে, হাইস্কুল থেকে কলেজে যায়, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়, আস্তে আস্তে মানুষ উন্নত হয়। আস্তে আস্তে মানুষের পরিবর্তন হয়, ইতিবাচক পরিবর্তন। আর আমরা বার বার যেন সাপ-লুডুর মতো অনেকদূর এগিয়ে যাই, আবার সাপে কেটে নিচে চলে আসি, আবার আগানোর চেষ্টা করি, এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ কতটুকু সুরক্ষা দেয়?’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম খান এ কথা বলেন। সেমিনারে আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আমাদের দেশে শ্রম আইনে আছে, প্রত্যেক শ্রমিককে নিয়োগপত্র দিতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে যত শ্রমিক আছে তার ২০-২৫ শতাংশও নিয়োগপত্র পায় না। তাদের গ্রাচুইটি, সুবিধা কোনোটাই দেয়া হয় না, যা শ্রম আইনে লেখা আছে। যারা শ্রমিককে কম মজুরি দেয়, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি বা অভিযোগ দেয়ার কোনো মেকানিজম নেই।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের নারী, শিশু, যুবক, শ্রমিক সবার জন্য আইন আছে। কিন্তু তারা কি আইনের বিষয়ে কিছু জানেন, বোঝেন, বা সুফল ভোগ করতে পারেন? প্রত্যেক রাজনীতির দলের যারা প্রতিনিধিত্ব করেন তাদের উচিত সবাইকে আইন বুঝিয়ে দেয়া, আইনের সুফল বোঝানো। আর যদি তা না করা হয়, সাধারণ মানুষ সেই তিমিরেই থেকে যাবে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, যারা আইন প্রয়োগের দায়িত্বে, তারা যদি আইন প্রয়োগে কোনো ভুল করে, ইচ্ছাকৃত ভুল এবং তারা যদি অন্যায়ভাবে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে জনগণের ওপর নিপীড়ন চালায়, তাদের শাস্তির বিধান কোথায়? সংস্কার কমিশন আলাপ হচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, আমাদের যে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো বিশাল ক্ষমতার অধিকারী যারা, তাদের কী হবে? হয় তারা পদত্যাগ করে কিংবা তাদের অবসর দেয়া হয়। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ একটা দেশের বা অন্য একটা মানুষের কতই বা ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু যারা বড় বড় পদে বসে আছে, যারা বড় বড় দায়িত্ব পালন করছে, তারা তো এই দেশ এবং দেশের মানুষের অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে এই যে সুরক্ষা আইন, এসব আইন যারা কার্যকর করবে, যারাই ক্ষমতার অধিকারী হবে রাষ্ট্রের মাধ্যমে, তাদের প্রত্যেককেই দায়বদ্ধ এবং জবাবদিহিতার আওতায় রাখা। আর সে কারণে তারা যদি তাদের দায়িত্ব পালনটা অবহেলা করে কিংবা অপরাধমূলক কোনো কাজে যুক্ত হয়, তাহলে তাদের যেন শাস্তি হয়, সেই বিধান যেন প্রত্যেক আইনে থাকে- এরকম একটা দাবিও আমাদের থাকা দরকার। আর না হলে আইনের ভাষা যত সুন্দরই করি, আমাদের যত আকাঙ্ক্ষা আইনের কাগজ দ্বারা লিপিবদ্ধ, তা সাধারণ মানুষের কল্যাণ হবে না।
আপনার মতামত লিখুন :