ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই, ২০২৫

ছুটির দিনেও রাজপথ ছিল অগ্নিগর্ভ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৫, ১১:২৬ এএম

ছুটির দিনেও রাজপথ ছিল অগ্নিগর্ভ

 

২০২৪ সালের ৫ জুলাই। দিনটি ছিল শুক্রবার, সরকারি ছুটির দিন। সেদিনও বিক্ষোভে উত্তাল ছিল সমগ্র দেশ। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ ও সমাবেশ করেছিলেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর শিক্ষার্থীরা। দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর পাশাপাশি সব জেলা শহরে সড়ক অবরোধ, মিছিল ও মানববন্ধন করেন তারা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে মিছিল বের করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে মানববন্ধন করেন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও ফুঁসে উঠেছিল বিক্ষোভে।

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিকাল সাড়ে পাঁচটায় নগরীর ২ নম্বর গেট মোড়ে সিডিএ অ্যাভিনিউ অবরোধ করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিকেলে খুলনার জিরো পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করেন। গোপালগঞ্জে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষার্থীরা দুপুর ২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়ক অবরোধ করেন।

সেদিনও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি ও হয়রানি করে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলের ছাত্র ও আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমকে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টার পর শিক্ষার্থীরা হলে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান। পরে হল কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন) শীর্ষ নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

এদিকে ৫ জুলাইয়ের কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা ৬ জুলাই প্রতিবাদ ও ৭ জুলাই দেশজুড়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ডাক দেন।

বিক্ষোভের সূচনা হয় হাইকোর্টের ৫ জুনের রায়ের পর। সেই রায়ে ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের পরিপত্রের ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা অংশটিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। রায়ের পর শিক্ষার্থীরা ঈদের আগে কিছুদিন বিক্ষোভ করেন এবং সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন। দাবি পূরণ না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে আন্দোলন আরো জোরদার হয়।

এদিকে শিক্ষার্থীদের এই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রতিদিনই মিছিল, বিক্ষোভ ও অবরোধ চলছিল। ২ জুলাই এক ঘণ্টা, ৩ জুলাই দেড় ঘণ্টা এবং ৪ জুলাই দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে এবং কোটাব্যবস্থা নিয়ে নতুন পদক্ষেপ নিতে একটি কমিশন গঠন করে বৈষম্যমূলক কোটাগুলো বাতিল ও যৌক্তিক কোটা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। কোটায় প্রার্থী না থাকলে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে এবং একই ব্যক্তি যেন একাধিকবার কোটার সুবিধা না পান– তা নিশ্চিত করতে হবে।

শুরুতেই চলমান আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাদা দল’। তারা এটিকে ‘যৌক্তিক ও ন্যায্য’ আন্দোলন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

বিষয়:

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!