ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫

বিএনপি নেত্রীর লড়াই, জামায়াতের একক প্রার্থী ভাসুরের সঙ্গে

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৫, ১১:৩৬ এএম

বিএনপি নেত্রীর লড়াই, জামায়াতের একক প্রার্থী ভাসুরের সঙ্গে

 

জেলার নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন। এ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। একাধিক গ্রুপে বিভক্ত বিএনপিতে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেতে একাধিক প্রার্থীর মধ্যে আপন ভাবি, ভাসুরও তৎপর। মনোনয়ন লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। সবকটি উপজেলাতেই দলীয় কোন্দল চরমে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী এ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেই জোর কদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফিরে পাওয়ায় প্রচারে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে দলটি ।

ফলে বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ- ২ আসনটিতে দলটির চ্যালেঞ্জ হবে জামায়াত।

 

এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের অভিমত, সম্প্রতি লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে দ্বিধা কেটে যাওয়ায় সারা দেশের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও প্রচারে আগের চেয়ে গতি বাড়িয়েছেন।

সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিতে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন। এলাকায় নানা কর্মসূচি পালন করছেন। তারা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। নিজ নিজ দলের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলটির ৩১ দফা প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর তাদের নিজ নিজ নেতাকর্মী অনুসারীরাও সরব সামাজিক মাধ্যমে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছিলেন।

এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরো আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম তুহিন, গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সেন্টু, সাবেক মেয়র তারিক আহম্মেদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক মাসউদা আফরোজ হক শুচি, বুয়েটের আহসান উল্লাহ হলের সাবেক ভিপি মু. ইমদাদুল হক মাসুদ।

এ আসনে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ড. মু. মিজানুর রহমানকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি ।

বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে মাসউদা আফরোজ হক শুচি ও মো. আমিনুল ইসলামের বাড়ি নাচোল উপজেলায়। শুচি আমিনুল ইসলামের ছোট ভাইয়ের বউ। অন্য প্রার্থীদের বাড়ি গোমস্তাপুর উপজেলায়।

২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শপথ নেওয়ায় আমিনুল ইসলামের ওপর ক্ষুব্ধ হন তৃণমূল বিএনপি। এদিকে জামায়াতের একক প্রার্থীও স্বস্তিতে নেই। কারণ বিএনপির ভোট ব্যাংক এ আসনে বেশ শক্তিশালী। সেখানে বিএনপি নেত্রী মাসউদা আফরোজ হক শুচি তৃণমূল থেকে দলীয় হাই কমান্ড পর্যন্ত জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি প্রার্থী হলে ভোটের মাঠে ভালো করবেন বলে দলটির একাংশের নেতাকর্মীরা মনে করছেন। তবে এ আসনে জামায়াতের নেতাকর্মীদের দাবি বিগত দিনের তুলনায় জামায়াতে ইসলামীর ভোট ও জনপ্রিয়তা দুটোই বেড়েছে ।

এদিকে গত বছরের ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মু. জিয়াউর রহমান ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস বর্তমানে পলাতক। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকলে তাদের কর্মী সমর্থকদের ভোট কোনো পাত্রে যাবে এ নিয়েও এই আসনে চলছে নানা গুঞ্জন। ধানের শীষ না দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের অধিকাংশ ভোট যে প্রার্থী পাবেন সে প্রার্থী এ আসনে জয়ী হতে পারেন এমনটাই মনে করেন এখানকার ভোটার ও সাধারণ মানুষ।

জামায়াতের প্রার্থী ড. মু. মিজানুর রহমান বলেন, দলের প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই তিনি মাঠে রয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করার কথাও জানান তিনি। মিজানুর রহমান বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে দাঁড়িপাল্লার বিজয় নিশ্চিত।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক মোসা. মাসউদা আফরোজ হক শুচি বলেন, তিন উপজেলায় দলের নির্যাতিত, মামলা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে থেকে ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। স্থানীয় তৃণমূল বিএনপি ও কেন্দ্রের নির্দেশা অনুযায়ী কাজ করছি। এ ক্ষেত্রে দল অবশ্যই আমাকে বিবেচনা করবে।

রহনপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র তারিক আহম্মেদ বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে বিএনপিকে সুসংগঠিত করে রেখেছি। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ৩১ দফা নিয়ে মাঠে কাজ করছি। তিনি বলেন, বিএনপির মনোনয়ন পেলে আসনটিতে বিজয় উপহার দিতে পারবেন তিনি।

অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সেন্টু বলেন, শেখ হাসিনার আমলে বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন মামলা, হামলায় ঘর-বাড়ি ছাড়া, তখন সাধ্যমতো আইনি সহায়তা দিয়ে পাশে থেকেছি। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যন্ত সব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। এর প্রতিদান দল অবশ্যই দিবে বলে বিশ্বাস করেন নুরুল ইসলাম সেন্টু।

অন্যদিকে, এ আসনটিতে এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলনসহ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম তেমন দেখা যাচ্ছে না।

বিষয়:

নির্বাচন চাঁপাইনবাবগঞ্জ

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!