ঢাকা শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫

ঐকমত্যের সংলাপ একমত বিএনপিও নির্বাচন কমিশন গঠনে থাকছে না প্রধামন্ত্রীর হাত

বর্তমান বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৯:৩৯ পিএম

ঐকমত্যের সংলাপ  একমত বিএনপিও নির্বাচন কমিশন গঠনে থাকছে না প্রধামন্ত্রীর হাত

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ মুক্ত রাখতে রাজি হয়েছে বিএনপি। সরকার নয়, সাংবিধানিক ঐকমত্যের সংলাপ।

স্পিকার, বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত সিলেকশন (বাছাই) কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন হবে। সংবিধান সংশোধন করে ১১৮(১ক) অনুচ্ছেদ যোগ করা হবে এই কমিটি গঠনে। 

বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৮তম দিনের সংলাপে এই বিষয়ে একমত হয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল। সাংবিধানিক কমিটি মাধ্যমে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি), ন্যায়পাল এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিয়োগ প্রস্তাবে এখনও রাজি নয় বিএনপি। দলটি আইনের মাধ্যমে নিয়োগ চায়। এতে সরকারের কাছেই থাকবে নিয়োগ। বিএনপি ইসি গঠনেও আইন চেয়েছিল। আজ দলটি অবস্থান বদল করে। 

বুধবার আলোচ্যসূচিতে পিএস, সিএজি, ন্যায়পাল এবং দুদকের নিয়োগে কমিটি গঠনের প্রস্তাব থাকলেও, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ১৩টি রাজনৈতিক দলের বৈঠকের কারণে আলোচনা হয়নি। 
প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র কমাতে সাংবিধানিক এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) মাধ্যমে নিয়োগের প্রস্তাব করেছিল ঐকমত্য কমিশন। এতে নির্বাহী বিভাগ তথা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমে যাবে যুক্তিতে বিএনপি ঘোর বিরোধিতা করে। এরপর কমিশন সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করলেও, তা বিএনপির আপত্তিতে টেকেনি।
 
মঙ্গলবার নতুন প্রস্তাব করে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন কমিশন। এতে বলা হয়েছে, ইসি, পিএসসি,  সিএজি, এবং ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার, তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি এবং প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিসহ ৭ সদস্যের কমিটি।
 
আজকের সংলাপে বিএনপি ইসি গঠনের কমিটি থেকে তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করে। তা মেনে নিয়ে জামায়াত প্রস্তাব করে, রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধিও রাখা যাবে। বিএনপি, এনসিপিসহ অন্যরা তা মেনে নেয়। 

প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ মুক্ত ইসি গঠন

সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের এবং হাইকোর্টের দুজন বিচারক, পিএসসি চেয়ারম্যান, সিএনজি এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন করা হয়। সার্চ কমিটি সিইসি এবং চার কমিশনার পদের জন্য ১০ জনের নাম প্রস্তাব করে রাষ্ট্রপতির কাছে। সেখান থেকে পাঁচজনকে নিয়োগ দেন তিনি। তবে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের কারণে, আদতে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই নিয়োগ দিতে হয় রাষ্ট্রপতিকে। ফলে কার্যত প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় গঠন হয় ইসি।
 
ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, ইসির মেয়াদ পূর্তির ৯০ দিন আগে বাছাই কমিটি গঠিত হবে। সংসদের আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, প্রার্থী অনুসন্ধানের পদ্ধতি, প্রাধিকার ও কর্মপদ্ধতির উল্লেখ থাকবে।
 
সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার থেকে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা ইচ্ছাপত্র দিলে নিজস্ব উদ্যোগে উপযুক্ত প্রার্থীর অনুসন্ধান করবে। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ব্যক্তিদের জীবনবৃত্তান্ত যাচাইয়ের পর বাছাই কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সিইসি পদে একজনের এবং প্রতিটি নির্বাচন কমিশনার পদের বিপরীতে একজনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে। রাষ্ট্রপতি প্রস্তাবিত নাম থেকেই নিয়োগ দিতে বাধ্য থাকবেন। সিইসি এবং কমিশনারদের জবাবদিতার জন্য আইন ও আচরণবিধি প্রণয়ন করা হবে। 

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের পূর্বের অবস্থান থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছাড় দিয়ে আজ যে ঐকমত্যে পৌঁছেছে, তা একটি স্বাধীন ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করবে। 

দলগুলো যা বলল

বিএনপি সংলাপের শুরু থেকেই বলেছিল, সংবিধানিক নিয়োগ কমিটি নয়, নিয়োগ আইনগুলো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। 

ইসির জন্য ছাড়া দিলেও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা মানবে না, এমন আভাস দিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, প্রতিটি সাংবিধানিক এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জন্য সংবিধানে আলাদা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া না এনে, আইনের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আচরণবিধি নিশ্চিত করতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশনের বিষয়টি সংবিধানে আলাদা করে উল্লেখ করা যায়। 

সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, বাছাই কমিটি  ইসির জন্য প্রার্থী খুঁজতে অনুসন্ধান পরিচালনা করবে। নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণ নাম জমা দেবে। আইনের মাধ্যমে অনুসন্ধানের পদ্ধতি নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে বিএনপি। 

তিনি বলেন, এর আগে সার্চ কমিটি জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাছাই করে সংক্ষিপ্ত তালিকা বাছাই কমিটিকে দেবে। কমিটি চাইলে এই তালিকা থেকে অথবা নিজেরা আরও প্রার্থী বিবেচনায় নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠাবে নিয়োগের জন্য। 

বিএনপির এই নেতা বলেন, অতীতে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন হলেও তারা স্বাধীনভাবে কাজ করেনি।
 
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, শেষ পর্যন্ত সবাই একমত হয়েছি, ইসির গঠন সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী কমিশনারের সংখ্যা হ্রাস বৃদ্ধি হতে পারে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের পর একটি নতুন ধারা যুক্ত করে আইন প্রণয়ন করতে হবে, যা নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ, জবাবদিহিতা ও অপসারণ প্রক্রিয়া নির্ধারণ করবে।

বাছাই কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার পরিবর্তে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিয়মের ফলে অচলাবস্থার সৃষ্টির আশঙ্কা থাকলেও ডা. তাহের বলেন, আজকের আলোচনা ছিল ঐক্য ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে। যা আগামী নির্বাচনের জন্য শক্তিশালী সাংবিধানিক ভিত্তি তৈরি করবে।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন বলেন, শুধু ইসি নয়, অন্যান্য সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়াও সংবিধানে থাকতে হবে। শুধু ইসি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে। পিএসসি, সিএজি, দুদদ এবং ন্যায়পাল নিয়োগের এখনও মতভিন্নতা রয়েছে। বিএনপি চায়, এসব প্রতিষ্ঠানে আইনের মাধ্যমে নিয়োগ হোক। যা আসলে পরিবর্তনযোগ্য। তাই এনসিপি চায়, এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটির গঠন সংবিধানে যুক্ত হোক। যাতে সংস্কার টেকসই হয়।
 
আখতার বলেন, এখন পর্যন্ত জনপ্রশাসন, পুলিশ, স্থানীয় সরকার নিয়ে আলোচনা হয়নি। অথচ এই তিনটি অঙ্গ ছাড়া কোনো সংস্কার টিকবে না। 

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!