ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আগস্টে প্রবাসী আয় এলো সাড়ে ২৯ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫, ০৭:৪৩ পিএম

আগস্টে প্রবাসী আয় এলো সাড়ে ২৯ হাজার কোটি টাকা

ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের আগস্ট মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ আবারও ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে ২৪২ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ২৯ হাজার ৫৪৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। এ আয়ের মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি এসেছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরেক হোসেন খান বলেন, আগস্ট মাসের পুরো সময়ে ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। গত বছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২২২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সে হিসাবে চলতি আগস্টে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ বেড়েছে ১৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা ৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্টে) মোট ৪৯০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। এর টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫৯ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৭৬ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা প্রবৃদ্ধি হিসেবে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েই দেশে আসে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার ডলার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স। টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। যদিও ওই মাসে ৮টি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। তবুও সামগ্রিক প্রবাহ ইতিবাচক ছিল।


বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিকতা বিগত কয়েক মাস ধরে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ মাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। এটি ছিল মাসভিত্তিক হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সপ্রবাহ। পুরো অর্থবছরে প্রবাসী আয় হয়েছিল ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহ জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার, মে মাসে ২৯৭ কোটি ডলার এবং জুনে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ও রেমিট্যান্স প্রেরণের প্রক্রিয়া সহজ করার কারণে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়ছে। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠানো সহজ হওয়ায় হুন্ডির প্রতি নির্ভরশীলতা কমছে। এতে বৈধ চ্যানেলে ডলারের প্রবাহ বেড়ে দেশের রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এ বিষয়ে অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। প্রবাসী আয়ের এই ইতিবাচক প্রবাহ অর্থনীতিতে আশার সঞ্চার করছে। সরকারের প্রণোদনা ও বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানোর সুযোগ সহজ হওয়ায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের প্রতি ঝুঁকছেন। তবে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা, প্রবাসীদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং হুন্ডি প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রবাসী আয়ের প্রবাহ স্থিতিশীল থাকলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ও রিজার্ভ শক্তিশালী করা সম্ভব হবে।

ব্যাংকাররা বলছেন, প্রবাসী আয় দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। ডলার সংকট মোকাবিলায় এই খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে আমদানি ব্যয় মেটানো, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ এবং উন্নয়ন ব্যয়ের চাপ সামাল দিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের জন্য বড় সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রণোদনার পাশাপাশি প্রবাসী কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন, নতুন শ্রমবাজার খোলা এবং প্রবাসীদের জন্য আর্থিক সেবায় আরও স্বচ্ছতা আনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। তাদের মতে, এসব পদক্ষেপ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ প্রবাসী আয়ে আরও এগিয়ে যেতে পারবে।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!