ফাইল ছবি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দুই সদস্য, দুই কমিশনারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার পাঁচজনকে অনুসন্ধানের আওতায় আনা হয়। এর আগে গত ১ ও ২ জুলাই তিন সদস্য ও এক কমিশনারকে অবসরে পাঠানো হয়।
সূত্র জানায়, যে ১৬ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে এবং যে চারজনকে অবসরে পাঠানো হয়েছে, তাদের কেউ কেউ এরই মধ্যে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে আগে থেকেই দুদকে অভিযোগ ছিল। সরকারের নির্দেশনা ও শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ গত ২৯ জুন আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়।
গত বৃহস্পতিবার কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে করদাতাদের ফাঁকির সুযোগ করে দেওয়াসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে এনবিআরের দুই কমিশনারসহ আরও পাঁচ কর্মকর্তাকে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুসন্ধানের আওতায় আনে দুদক। গত ২৯ জুন ছয়জন, গত ১ জুলাই পাঁচজন ও গতকাল বৃহস্পতিবার আরও পাঁচজনসহ ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, অবসরে পাঠানো ও দুদকের অনুসন্ধানের প্রেক্ষাপটে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। নাম প্রকাশ না করে তাদের কেউ কেউ বলেছেন, তারা আন্দোলনে যোগ দিয়ে এখন চাপে আছেন। কেউ বলছেন, তারা সরকারের সঙ্গে বারবার বিষয়টি নিয়ে বসার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সরকার তা আমলে নেয়নি।
এনবিআরের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, যাদের অবসরে পাঠানো হয়েছে, তাদের ব্যাপারে উদ্দেশ্যমূলক কিছু করা হয়নি। তবে দেড় মাসের আন্দোলনে দেশের আমদানি-রপ্তানি ও রাজস্ব আহরণ মারাত্মক ব্যাহত হয়েছে।
গত বুধবার অবসরে পাঠানো তিন সদস্যের মধ্যে দু’জনের দপ্তরে বিদ্যমান অন্য কর্মকর্তাদের নিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সদস্য ড. মোহা. আল আমিন প্রামাণিককে কাস্টমস নীতি ও আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সদস্য (কর তথ্য ব্যবস্থাপনা ও সেবা) আবু হান্নান দেলোয়ার হোসেনকে কর অডিট, ইন্টেলিজেন্স ও ইনভেস্টিগেশন বিভাগে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুসন্ধান শুরু হয়েছে তারা হলেন– কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট শাখার কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, বেনাপোল স্থলবন্দরের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান, আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটের অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা, রাজশাহী-৭ সার্কেলের উপকর কমিশনার মো. মামুন মিয়া ও ঢাকার কর অঞ্চল-২ এর কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছ থেকে নির্ধারিত পরিমাণ কর আদায় না করে তাদের করের পরিমাণ কমিয়ে দিতেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিবছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্বপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এনবিআরে সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে গত ১২ মের পর থেকে আন্দোলন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে সরকারের হয়ে রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটিতে এক ধরনের অচলাবস্থা শুরু হয়। এতে সেবায় বিঘ্ন ঘটে।
- বিষয় :
- দুদক
আপনার মতামত লিখুন :