ঢাকা সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫

দুলালের ২৩ বছর কারাগারে শৃঙ্খলা-দায়িত্বশীল ভূমিকা; পেল নতুন দোকান

বিকাশ চন্দ্র প্রামানিক ( নওগাঁ)

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৫, ০৬:৫৯ পিএম

দুলালের ২৩ বছর কারাগারে শৃঙ্খলা-দায়িত্বশীল ভূমিকা; পেল নতুন দোকান

দুলাল হোসেনের বর্তমান বয়স (৫০)। ২৫ বছর বয়সেই শুনতে হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়। এতে জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে যায় তার। কিন্তু কারাগারের শৃঙ্খলা এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য আজ তিনি নতুন ভাবে পথ শুরু করলেন। তার আবদারে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিলেন ডিসি।

বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় দুলাল হোসেনের স্ত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। হত্যা মামলায় ২৫ বছর বয়সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন দুলাল। এরপর ২৩ বছর সাজা ভোগ করে চলতি বছরের গত ২ জুলাই মুক্তি পেয়েছেন দুলাল হোসেন।

দীর্ঘ সময় দুলালের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে অনেক কিছু। তবে জেলের ভেতরেই গড়ে তোলেন আরেক জীবন। কারাগারের শৃঙ্খলা মেনে চলা এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করায় মুক্তির পর নিজ গ্রামে নতুন মুদি দোকান পেয়েছেন দুলাল।  

দুলালকে পুনর্বাসন করতে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের উদ্যোগে একটি মুদি দোকান উপহার দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৮আগষ্ট) দুপুরে দুলাল হোসেনকে নতুন ওই মুদি দোকানটি দেওয়া হয়।

এদিন বিকেল ৬ টার দিকে দোকান দেওয়ার বিষয়টি মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান ছনি।

দুলাল হোসেন নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নের বারাতৈল গ্রামের মৃত ইয়াকুব হোসেনের ছেলে।

দুলাল হোসেন বলেন, “পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী আত্মহত্যা করে। পরে শ্বশুরের দেওয়া হত্যা মামলায় ২০০২ সালে জেল হয় তার। সেই মামলায় ২৫ বছর বয়সে যাবজ্জীবন জেল হয় তার। এরপর ১৪ বছর রাজশাহী জেলা কারাগারে বন্দীদের (সিআইডি) হিসাবে কাজ করেন। বন্দীরা গোপনে কি পরিকল্পনা করছে তা দেখাশুনা করতেন তিনি। পরে নওগাঁ জেলা কারাগারে আসেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, মামলা চলাকালে তাকে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। উকিল খরচ ও মামলার অন্যান্য ব্যয় মেটাতে গিয়ে পরিবারের শেষ সম্বল জমিও বিক্রি করে দিতে হয়েছে। খরচ চালাতে ব্যর্থ হয়ে একসময় বিচারের আশা ছেড়ে দেন স্বজনরা।

একটা সময় জেলখানায় তাকে আর কেউ দেখতেও আসত না। মাঝে মাঝে মা আয়েশা কিছু টাকা দিয়ে আসলেও  তিনি তা খরচ করতেন না। এসব কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পরেন দুলাল”।

তবে দায়িত্বশীল আচরণ ও শৃঙ্খলা মেনে চলার কারণে কারাগারে সুনাম ছিল দুলালের। কারাগারে বন্দীদের দেখাশুনা করতেন তিনি। এভাবেই কারাগারে ২৩ বছর অতিবাহিত হয় তার।

জেল থেকে মুক্ত হয়ে আগামী জীবনে কি করে চলবেন, তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পরেন দুলাল। জীবনের এ পর্যায়ে এসে সহযোগিতা ছাড়া সমাজে আর প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে মুদি দোকান করবেন বলে ঠিক করেন তিনি। এরপর সেই আবদার তুলে ধরেন নওগাঁ জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়ালের কাছে।

স্থানীয় গ্রামবাসি বলেন, “দুলাল তার জীবনের ২৩ বছর জেল খানাতে ব্যয় করেছে। তার ভিটেমাটি কিছুই নাই। সে কোথায় থাকবে। যদি তাকে বসবাসের জন্য ডিসি সাহেব একটি ঘর দেয়, তাহলে দুলাল বসবাস করে থাকতে পারবে”।

দুলালের মা আয়েশা বলেন,“ছেলেকে ফিরে পেয়ে আমি খুবই খুশি। আমার ছেলেকে একটি বাড়ি তৈরী করে দিলে মাথা গোঁজার ঠাই হবে”।

দোকান দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, দুলাল হোসেন আগামীতে যাতে কোনো অপরাধে জড়িয়ে না পড়েন, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দুলাল যেন নতুন করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে তাই তাকে মুদি দোকান উপহার হিসাবে দেওয়া হয়েছে”।
 

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!