ঢাকা রবিবার, ০৯ নভেম্বর, ২০২৫

মৌলভীবাজার জেলাকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকির প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে মৌলভীবাজারবাসী

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৫, ০৭:৫৯ পিএম

মৌলভীবাজার জেলাকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকির প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে মৌলভীবাজারবাসী

ছবি: বর্তমান বাংলাদেশ।

হবিগঞ্জ মোটর মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ কর্তৃক মৌলভীবাজার জেলাকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকির প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে মৌলভীবাজারবাসী।  গত (৭ নভেম্বর) থেকে উত্তপ্ত এই পরিস্থিতি রোববার (৯ নভেম্বর) গণঅবস্থান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আরও বেগ পায়।

মৌলভীবাজার শহরের ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে অনুষ্ঠিত এ গণঅবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, অটোরিকশা চালক সমিতি এবং সর্বস্তরের মানুষজন।

কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন জেলা পরিবহন শ্রমিক নেতা রফিকুল ইসলাম রসিক, জেলা অটোরিকশা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম, কুলাউড়া বাস মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম আনছার, মৌলভীবাজার জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব, জেলা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ তোয়েল, সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার মিয়াসহ অনেকে।

প্রসঙ্গত, গত ১ নভেম্বর মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গল–মৌলভীবাজার–সিলেট রুটে বিরতিহীন বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন সাবেক এমপি এম নাসের রহমান। এদিন হবিগঞ্জ সিলেটে বিরতিহীন বাস সিলেটের দয়ামীরে রোড এক্সিডেন্টে  তিনজন মারা যান। এ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “হবিগঞ্জ বিরতিহীন বাস সিলেট মৌলভীবাজার রুটে বহুদিন ধরে ফিটনেসবিহীন পুরোনো গাড়ি চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে, তাই বহুবছরের পুরাতন ফিটনেসবিহীন গাড়ি এ রুটে না চলতে দেয়ার আহবান জানান ।”

তাঁর এই মন্তব্যের জেরে হবিগঞ্জ মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মঈন চৌধুরী সোহেল সংবাদ সম্মেলনে মৌলভীবাজারকে “বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার” হুমকি দেন।

এ হুমকিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় মৌলভীবাজার জেলা পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। রোববার সকাল ১১টায় মৌলভীবাজার শহরের বেরিরপার এলাকায় সড়ক অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়, যা পরে  দুই জেলার নেতাদের আলোচনায় বসে সমাধানের  আশ্বাসে স্থগিত করা হয়।

পরিস্থিতি সামাল দিতে হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব জি কে গউছ যোগাযোগ করেন মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন এবং জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপনের সঙ্গে।

অবস্থান কর্মসূচির সমাবেশে ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, “আইন অনুযায়ী হবিগঞ্জের গাড়ি মৌলভীবাজারে যাবে, মৌলভীবাজারের গাড়ি হবিগঞ্জে যাবে—এটাই নিয়ম। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। উত্তেজনা নয়, আলোচনার মাধ্যমেই সব সমাধান হবে।”

তিনি আহ্বান জানান, “মৌলভীবাজারবাসী ধৈর্য ধরুন, আমাদের আলোচনা সফল হবে। মনে করুন, সমাধানের পথে আমরা অনেকটা এগিয়ে গেছি।” আজ সন্ধ্যার পর আপনাদের সাথে জি কে গউছ বসবেন।

গণঅবস্থান কর্মসূচিতে জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম রিপন বলেন, “আজকের অবস্থান চলাকালে হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছ আমাদের জানিয়েছেন—বিষয়টি যেন আর না বাড়ে। আমরা কটূক্তির জবাবে শান্তির বার্তা দিতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “মৌলভীবাজারবাসী ঐতিহ্যগতভাবে সম্প্রীতির মানুষ। কেউ আমাদের প্রতি কাঁদা ছুঁড়লে আমরা বলি—‘আপনি কি হাতে ব্যথা পেয়েছেন?’ এটাই আমাদের সংস্কৃতি, এটাই ধৈর্য। আমরা হানাহানি মুক্ত, শান্তিপ্রিয় মানুষ। কেউ কাউকে বিচ্ছিন্ন করবে না, কেউ কাউকে আন্ডারমাইনও করবে না।”

রিপন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “দেশে-বিদেশে অনেকেই সাইবার যুদ্ধ শুরু করেছেন, কিন্তু এটি মৌলভীবাজারের কালচার নয়। আমরা সম্প্রীতির মানুষ—শান্তির বার্তাই দিতে চাই।”

এদিকে অবস্থান কর্মসুচীতে বক্তারা একসঙ্গে ঘোষণা দেন
“মৌলভীবাজারকে হুমকি দেওয়া মানেই বাংলাদেশের ঐক্যে আঘাত। এমন উসকানি আর সহ্য করা হবে না।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!