গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার আওড়াখালী বাজারে শুভংকর দাস নামে এক ব্যক্তি অনুমোদিত সনদ ছাড়াই দাঁতের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনুমোদিত চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের কোনো সনদ না নিয়েই নিজের ইচ্ছামতো নামের আগে বড় বড় ডিগ্রি ব্যবহার করে দাঁতের চিকিৎসালয় খুলে বসেছেন তিনি।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) স্বীকৃত সার্জন কিংবা ডিএমটি ডিপ্লোমা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না হয়েও নামে আগে ডাক্তার সহ নানা চটকদার বিশেষণ লিখে রোগী বাগিয়ে নিতে ব্যস্ত এ নামধারী চিকিৎসক। প্রকাশ্যে চেম্বার খুলে দিনের পর দিন তারা কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও জেলা বা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন কোনো তদারকি চোখে পড়েনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়,উপজেলায় দুইজন ডেন্টাল সার্জন এবং দুজন ডেন্টিস্ট ছাড়া কালীগঞ্জে ডিগ্রিধারী দাঁতের কোনো চিকিৎসক বা ডেন্টিস্ট নেই। তবে কালীগঞ্জ উপজেলার আওড়াখালী বাজারে ঢাকা ডেন্টাল নামের একটি চিকিৎসালয় বিনা সনদেই চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ঢাকা ডেন্টালের কতৃপক্ষের নিকট জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান,এখানে মার্কস ডেন্টাল কলেজের লেকচারার ডা: মাহবুবা খানম প্রতিনিয়ত রোগী দেখেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী রোগীদের অভিযোগ,বিভিন্ন ব্যানার ও ফ্যাস্টুনে ডা: মাহবুবা খানমের নাম লেখা হলেও আসলে রোগী দেখেন ভুয়া ডাক্তার শুভংকর।সরেজমিন চিকিৎসালয় ঘুরে দেখা যায়, দাঁতের ফিলিং, স্কেলিং,লাইট কিউর, ফিলিং ক্যাপ,রোড ক্যানেল, দাঁত ওঠানো, দাঁত বাঁধানোর সব কাজই করা হচ্ছে। বিভিন্ন কাজে রোগীদের কাছ থেকে দুই হাজার থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। তবে তিনি কোন অনুমোদিত ডিগ্রিধারী ডাক্তার নন। এছাড়া ডাক্তারি সনদপত্রও দেখাতে পারেননি।
জানা যায়,উপজেলার আওড়াখালী বাজারে ঢাকা ডেন্টাল ও মাতৃছায়া ডেন্টাল কেয়ার নামে দুটি চিকিৎসালয় কোন ডিগ্রি না নিয়ে দন্ত চিকিৎসক পরিচয়ে চেম্বার করছেন। তার কাছে সনদ ছাড়া চেম্বার খুলে চিকিৎসা দেওয়া যায় কি না, এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন,আমার এখানে একজন দাঁতের ডাক্তার নিয়মিত আসেন। তবে তিনি নিজেকে একজন দন্ত চিকিৎসক দাবি করে বলেন, আমরা গ্রাম্য ডাক্তার। ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে তারপর চেম্বার খুলেছি। ঢাকা ডেন্টালে গ্যারান্টি সহকারে দাঁত তোলা, ফুল সেট দাঁত বাঁধানোসহ অন্য রোগের চিকিৎসা করেন শুভংকর। তিনিও নামের আগে ডাক্তার বসিয়ে চেম্বার খুলেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি হননি। তিনি আরওবলেন, আমি শুধু পরিচিত মানুষদের চিকিৎসা দিয়ে থাকি। ডিগ্রি না থাকলে পরিচিত বা অপরিচিত যে কাউকেই চিকিৎসা দেওয়া অপরাধ, এমন প্রশ্নের তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এ সময় শুভংকরের প্রয়োজনীয় ডিগ্রি ও চেম্বার খোলার অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে,তারা অপারগতা প্রকাশ করেছেন এবং কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
কালীগঞ্জ উপজেলার আওড়াখালী গ্রামের বাসিন্দা এমরান পালোয়ান বলেন,আওড়াখালী বাজারে অবস্থিত ঢাকা ডেন্টালে আমার বাবার দাঁতের ভর্তি করা হয়েছিল।ওনার নিকট থেকে দাঁত ফেলে ক্যান্সার হয়ে মারা যায়।আমরা অভিযুক্ত ব্যক্তির শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেন্টাল সার্জন কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,কালীগঞ্জে ডেন্টাল সার্জন বা ডেন্টাল টেকনোলজি ডিগ্রিধারী নেই বললেই চলে। আমরা এ বিষয়ে সর্তক আছি। প্রয়োজনে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রেজওয়ানা রশীদ বলেন,এ বিষয়টি ইতিমধ্যে আমরা অবগত হয়েছি। বিডিএস ও এমবিবিএস ছাড়া কেউ নামের আগে চিকিৎসক বা ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। কেউ যদি ডিগ্রি না নিয়েই নামের আগে চিকিৎসক শব্দ ব্যবহার করেন এবং অবৈধভাবে চেম্বার খুলে প্রাকটিস করে থাকেন আমরা ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে গাজীপুর সিভিল সার্জনকে একাধিক বার ফোন করেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
আপনার মতামত লিখুন :