জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, আমরা চাই সেনাবাহিনী একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে থাকুক, তারা যেন সিরিয়াল কিলারদের দায়ভার না নেয়।
তিনি বলেন, সিরিয়াল কিলাররা কোন পদে আছেন বা কোন প্রতিষ্ঠানে আছেন, সেটি মুখ্য বিষয় নয়। এদের সবারই সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে নেত্রকোনায় এনসিপির জেলা সমন্বয় সভায় অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে প্রায় ২৫ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটির উচিত নিজ অবস্থান থেকে সততা, মর্যাদা এবং স্বাধীনতা বজায় রাখা, যা বাংলাদেশের স্বার্থে প্রয়োজন। আমরা সবসময় চাই সেনাবাহিনী একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে থাকুক। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এই প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তা খুনি হাসিনা ও তার সরকার দ্বারা ব্যবহার হয়ে অসংখ্য খুন, গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আয়না ঘর বানিয়ে সেখানে বহু নির্মম ঘটনা ঘটনানো হয়েছে। এসব বহু নির্মমতার সাক্ষী আমরা। এমনকি আমরা দেখেছি মাত্র একজন কর্মকর্তা ১ হাজার ৩০ জনকে হত্যা করেছে- যা ট্রাইব্যুনালের তথ্য থেকে উঠে এসেছে। এরা এক ধরনের সিরিয়াল কিলার। এদের কারো পদ-পদবি কিংবা প্রতিষ্ঠানের নাম দেখে বিবেচনা করা চলবে না। এ ধরনের সিরিয়াল কিলারদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সারজিস আলম বলেন, আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আহ্বান জানাব, তারা যেন এই সিরিয়াল কিলারদের দায়ভার গ্রহণ না করে। বরং যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের বিচারের জন্য হস্তান্তর করতে সহযোগিতা করে। আমরা চাই, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যেন সব ধরনের কলুষতা থেকে মুক্ত থাকে। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তারা যেই পদে থাকুক বা যেই প্রতিষ্ঠানে থাকুক, তাদের উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, এই সরকারের অন্যতম বড় ব্যর্থতা হলো- ফ্যাসিস্ট কাঠামোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের তারা ক্ষমতা থেকে সরাতে পারেনি। বরং তারা ধীরে ধীরে পুনর্বাসিত হচ্ছে। আপনি যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেন, তারা যদি এখনও তাদের পদে বহাল থাকে- তাহলে তা স্পষ্টভাবে পুনর্বাসনেরই ইঙ্গিত দেয়। আমাদের লড়াই সেই পুরোনো সিস্টেমের বিরুদ্ধে, যে সিস্টেম অনেকগুলো স্বৈরাচার তৈরি করেছে। লাল ফিতার দৌড়াত্ব বন্ধ করতে চাই। কিন্তু এটা করতে গেলে ওই সিস্টেমের সঙ্গে সম্পৃক্তরাই নানা ভাবে বাধা দেয়। তারা এটাকে ক্রেডিট হিসেবে বিবেচনা করে। এসব বাধার ডকুমেন্টস আবার তাদের ফ্যাসিস্ট রানীর কাছে পাঠিয়ে ক্রেডিট নেয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এই সংগ্রাম দীর্ঘ এবং এটি চালিয়ে যেতে হবে। আমরা সকল রাজনৈতিক দলকে এবং এনসিপিকেও আহ্বান জানাব, যেন কেউ কোনো সিস্টেম, সুবিধা বা সমঝোতার বিনিময়ে ফ্যাসিস্ট কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্রয় না দেয়। আমরা বিশ্বাস করি, যদি আমরা এটা করতে পারি, তাহলে আমাদের জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
সেফ এক্সিট বিষয়ে সারজিস বলেন, সেফ এক্সিট মানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া হিসেবে বলা হয়নি। সেফ এক্সিটের কথাটা সব সব উপদেষ্টাদের ক্ষেত্রে বলায় হয়নি। কিছু উপদেষ্টার আচরণে এমনটা মনে হয়েছে, যেন তারা কোনরকমভাবে একটা নির্বাচন করে ক্ষমতা দিয়ে চলে যেতে চাইছে। নির্বাচনের আগে তাদের প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত হতে জনগণের আকাঙ্খার ভিত্তিতে। কোন দল এতে রাগ করলে না করলো এটা যেন তারা না দেখে। জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে মূল্যায়ন করতে না পারলে নির্বাচন পিছিয়েও যেতে পারে।
শাপলা প্রতীক পেতে এনসিপির আইনগত কোন বাধা নেই উল্লেখ করে সারজিস বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যে নির্বাচন কমিশন এসেছে তারা অবশ্যই এই স্বেচ্ছাচারিতা এনসিপির সাথে করবে না। অমরা আশা করি অবশ্যই শাপলা প্রতীক পাব, আমরা শাপলা প্রতীক নিয়েই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। নির্বাচন কমিশনের মতো একটি প্রতিষ্ঠান তাদের ওপর আমরা আগামীতে আস্থা রাখতে চাই। সেই নির্বাচন কমিশন যদি তার আগে কোনো না কোনো চাপে আমাদের যে বৈধ অধিকার শাপলা প্রতীক দিতে পিছুটান বা চাপ অনুভব করে, তাহলে তাদের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনে আস্থা পাওয়া কিন্তু আমাদের কঠিন হয়ে পড়বে।
শাপলা প্রতীক যদি না পান তাহলে কি করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে এনসিপির এই নেতা বলেন, যদি না পাওয়ার কোন কারন নেই। আইনগতভাবে যেহেতু কোন বাধা নেই, তাই শাপলা প্রতীক আমরা পাবই। না পাওয়ার কোন অপশন নেই। আমরা এটা আদায় করে নেব। সেটা রাজনৈতিকভাবে বা অন্য যেকোনভাবে আদায় করে নেওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাব।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, আগামী নির্বাচনে সারাদেশে প্রার্থী বাচাইয়ের জন্য কাজ করছে এনসিপি। সেজন্য আসন ভিত্তিক ও প্রার্থী ভিত্তিক বিভিন্ন বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এসব নিয়ে যাচাই বাচাইয়ে কাজ করছে একটি টিম। অধিকাংশ প্রার্থী হয়তো দলের ভেতর থেকেও হতে পারে, আবার দলের বাইরেও স্থানীয়ভাবে অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে তারাও আসতে পারেন।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত বা এমন বড় দলে হলেই যে আমরা তাদের সাথে ইলেক্ট্রোরাল কমিটমেন্টে যাব এমনটা নয়। আগামীর বাংলাদেশের জনগণের যে আকাঙ্খা, সেই আকাঙ্ক্ষার সাথে যে দলের কমিটমেন্ট থাকবে। সেই দলের সাথে নির্বাচনী ঐক্য হতে পারে এনসিপির। পরিবর্তনের কমিটমেন্টটা তাদের থাকতে হবে।
জেলা শহরের সালতী রেস্টুরেন্ট এন্ড পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের কেন্দ্রীয় সংগঠক প্রীতম সোহাগ এবং কেন্দ্রীয় সদস্য ফাহিম রহমান খান পাঠান। এছাড়াও নেত্রকোনা জেলার জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :