ঢাকা রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫

মৌলভীবাজার বিআরটিএ অফিসে দুর্নীতির মহোৎসব লাইসেন্স পেতে ঘুষ-দালালের দৌরাত্ম্য

মনজু বিজয় চৌধুরী, মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ০৯:২৭ এএম

মৌলভীবাজার বিআরটিএ অফিসে দুর্নীতির মহোৎসব লাইসেন্স পেতে ঘুষ-দালালের দৌরাত্ম্য

ছবি বর্তমান বাংলাদেশ

মৌলভীবাজার বিআরটিএ অফিসে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগে উঠেছে। প্রতিমাসে চলছে লাখ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্য। আংগুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছেন কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী। মৌলভীবাজারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অফিস যেন দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন শত শত সেবা প্রত্যাশী মানুষ সেখানে গেলেও অধিকাংশই ভোগান্তির শিকার হয় ফেরেন হতাশ হয়ে। অভিযোগ, লাইসেন্স কিংবা অন্যান্য কাজের জন্য সরকারি নির্ধারিত ফি দিলেই হবে না, দালাল বা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা ছাড়া সময় মতো কোনো কাজ সম্পন্ন হয় না। এভাবে কর্মকর্তা কর্মচারীর পকেটে যাচ্ছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। অফিসে নতুন পুরাতন দালালদের আনাগোনা বেড়ে যায়।
জানা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারি স্ব স্ব কর্মস্থলে একই স্থানে ৩ বছরের অধিক সময় না থাকার  নিয়ম থাকলেও এই নিয়মের প্রতি তোয়াক্কা না করে তারা বহাল তবিয়তে দীর্ঘদিন যাবৎ মৌলভীবাজার অফিসে আছেন। মৌলভীবাজার বিআরটিএ অফিসের দুর্ণীতি মুক্ত করতে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত প্রয়োজন বলে ভোক্তভুগী মনে করেন। একইসঙ্গে দালালচক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা এবং ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দালালদের দৌরাত্ম্য বিআরটিএ অফিসের ভেতরে-বাইরে সর্বদা দালালচক্র সক্রিয় থাকে। লাইসেন্স নবায়ন, গাড়ি রেজিস্ট্রেশনসহ প্রতিটি কাজে তাদের হস্তক্ষেপ রয়েছে। সাধারণ গ্রাহকরা বাধ্য হয়ে তাদের দ্বারস্থ হন। সেবার নামে এ এক ধরনের অবৈধ সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট চলছে। বিআরটিএ অফিস ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি সক্রিয় দালাল চক্র। কেউ বৈধ পন্থায় কিছু করতে গেলে কাজের কাজ কিছুই হয় না। উল্টো পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। 
এদিকে,দালাল ধরে কাজ করতে প্রয়োজন সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ। দালালরা অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে লবিং করে কাজ করে দেন। 
ভুক্তভোগী তারেক রহমান জানান, আমার শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট, এনআইডি এবং মেডিকেল সব কিছুর কাগজ দিয়েছি আমি। যারা নিচ্ছে তাদের চ্যানেলে কাজ হয়। আর যাদের নিচ্ছে না, তাদের কাজ হচ্ছে না এটা আমি দেখেছি। যারা লিখিত পরীক্ষা দেয় নাই, তাদের ও হয়েছে। ঘুষ দিলে আমার ও হয়ে যেতো। যারা ঘুষ দিয়েছে তাদের কাগজ টা হয়ে গেছে। ফেইল করলে ও পাস হয়ে গেছে। একটা চিহ্ন করা ফাইল আছে। এই ফাইল দেখে তারা প্রার্থী নির্বাচন করে। চিহ্নটার মানে তারা টাকা পাইছে। আমি ফাইল চাইছিলাম কিন্তু দেয় নাই। 
সার্ভারে সমস্যা বলে অনেক সময় লাগিয়েছে, দুপুর হয়ে গেছে বায়োমেট্রিক নিতে নিতে। বায়োমেট্রিকের পর লাইনে দাঁড়ালাম ভাইভা পরীক্ষার জন্য। তারপর আমি গেলাম ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের কাছে, জিজ্ঞেস করলাম  বৃষ্টি মাঝে আমার তো বাইরে দাঁড়িয়ে আছি পরীক্ষা নিবেন তো প্রাকটিকাল। তখন উনি বললেন, আর ও ৩০ মিনিট বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে। প্রাকটিকালের পর কবে কাগজ দিবে, সেটা তো তারা নিশ্চিত দেয় না।
স্থানীয় এক ভুক্তভোগীরা জানান, বাইর থেকে লাইসেন্স বানিয়ে আনছি। যে ভাইকে ধরেছি উনাকে ১৩ হাজার ৫শ টাকা দিয়েছি দালালকে। তিনি চার বছর আগে মৌলভীবাজার বিআরটিএ অফিসে প্র্যাকটিক্যাল ও টেকনিক্যাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেন। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ বছরেও হাতে লাইসেন্স আসেনি। তিনি একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ জানালেও কোনো সুফল মেলেনি।“এখানে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। দালালকে মোটা অঙ্কের টাকা দিলে এক সপ্তাহেই লাইসেন্স হাতে আসে, না দিলে বছরের পর বছর ঘুরেও সমাধান মেলে না।” 
এদিকে সচেতন মহল বলছে, মৌলভীবাজার বিআরটিএ অফিসের দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। বছরের পর বছর সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অথচ বিআরটিএ হলো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তর, যেখানে স্বচ্ছতা ও জনসেবা নিশ্চিত করার কথা। তাদের প্রশ্ন— কবে শেষ হবে এই দুর্নীতি? কবে মানুষ ঘুষ-দালাল ছাড়া সঠিক সময়ে লাইসেন্স হাতে পাবে?” ভোগান্তি কখন শেষ হবে?
বিআরটিএ অফিসের অফিস সহায়ক মো: শাহজান মিয়া উপস্থিত সাংবাদিককে টাকা অফার করেন। টাকা নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বলেন, ভাই আগে লাইসেন্সের জন্য যে টাকা পাওয়া যেতো, এখন সে সময় নাই। অনলাইন হয়ে যাওয়ায় আগের মতো পাওয়া যায়না।
বিআরটিএ মৌলভীবাজার অফিসে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
মৌলভীবাজার বিআরটি  সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মুহাম্মদ মোরশেদুল আলম ক্যামেরা সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!