ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই, ২০২৫

‘বাংলা ব্লকেডে’ স্তব্ধ রাজপথ রাজত্ব ছিল শিক্ষার্থীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৫, ১০:২৩ এএম

‘বাংলা ব্লকেডে’ স্তব্ধ রাজপথ রাজত্ব ছিল শিক্ষার্থীদের

 

 

 

 

দেশের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে গত বছরের আজকের দিনটি। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে ২০২৪ সালের ৬ জুলাই রাজধানীসহ সারা দেশের শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ডাক দিয়ে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। আগের দিন শাহবাগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে ওই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন আন্দোলনকারীরা।

তারা জানিয়েছিলেন, কোটা বাতিলসহ চার দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন না। ওই ঘোষণার পরদিনই, ৬ জুলাই দেশজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে ধর্মঘট পালিত হয়।

 

ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, রংপুর, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। রাজধানীর শাহবাগ, নীলক্ষেত, সায়েন্সল্যাব, মিরপুর রোড, বাংলামোটর, মিন্টো রোড, ঢাকা-আরিচা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কয়েক ঘণ্টা অচল ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে মিছিল, পদযাত্রা ও মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলেন।

‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘দফা এক, দাবি এক—কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘তারুণ্যের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘ঘুম নয় শাহবাগ, শাহবাগ, শাহবাগ!’ – স্লোগানে মুখর ছিল রাজপথ। বিক্ষোভ চলাকালীন শাহবাগ মোড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।

তবে আন্দোলনের পথে বাধাও এসেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থীদের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেছিল ছাত্রলীগের এক নেতা। হলগুলোতে আন্দোলনকারীদের বাধা দিয়েছিল সন্ত্রাসী সংগঠনটির ক্যাডাররা। পরে এটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা সংসদে আইন করে সব গ্রেডে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের এক দফা দাবি তুলেছিলেন। তারা জানিয়েছিলেন, অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য যৌক্তিক ও ন্যূনতম কোটা রাখা যেতে পারে, তবে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধা তালিকা থেকেই নিয়োগ দিতে হবে। একই কোটা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং প্রশাসনে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

আন্দোলনকারীরা বলেছিলেন, সরকার নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যকার দায় এড়িয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসন করেছিল। ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (বর্তমানে ভারতে পলাতক) কোটা বাতিলের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার পরিপত্র ২০২৪ সালে আদালতের রায়ের মাধ্যমে বাতিল হওয়ায় তাদের আন্দোলন নতুন করে শুরু হয়।

৬ জুলাই পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবরোধে অংশ নিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন কবি নজরুল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরাও।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদাত আহমেদ বলেন, ‘এখনও সেদিনের ঘটনা স্পষ্ট মনে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ক্যাডারদের ভয়ভীতি তোয়াক্কা না করেই শত শত শিক্ষার্থী কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলাম।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে হলে হলে ঘুরে আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছিলেন।

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান করেছিলেন।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মডার্ন মোড়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করেছিলেন। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেও ক্যাম্পাসের ফটকের সামনে সড়ক অবরোধ করেছিলেন।

খুলনার শিববাড়ি মোড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদ বলেন, ‘আমরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। আগের দিন থেকে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল। কিন্তু, আমরা ছিলাম দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’

ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের ছাত্ররা টাউন হল মোড়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছিলেন।

৬ জুলাইয়ের সেই কর্মসূচি শিক্ষা, রাজনীতি ও রাষ্ট্রের সঙ্গে তরুণদের সম্পর্ক নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছিল। ‘বাংলা ব্লকেড’ শুধু একটি অবরোধ কর্মসূচি ছিল না—তা হয়ে উঠেছিল তারুণ্যের বিদ্রোহের প্রতীক।

 

  

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!