ঢাকা শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫

শ্রীমঙ্গলে রেলওয়ে স্টেশনে কালোবাজারির হাতে টিকিট দখলে: যাত্রীরা অসহায়

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫, ০৭:১৪ এএম

শ্রীমঙ্গলে রেলওয়ে স্টেশনে কালোবাজারির হাতে টিকিট দখলে: যাত্রীরা অসহায়

ছবি বর্তমান বাংলাদেশ

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনে টিকিট কালোবাজারির মহোৎসব চলছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই অসাধু কার্যক্রম বন্ধে প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ যাত্রীরা। শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হয় সকাল ৮টায়, আর ৩০ মিনিটের মধ্যেই সব শেষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পান না, কেউ আবার বাধ্য হয়ে কালোবাজারিদের কাছ থেকে চড়া দামে কিনছেন। ট্রেনের টিকিট অনলাইনে প্রকাশ হওয়ামাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব টিকিট বুক হয়ে যায়। কাউন্টারে টিকিট নেই কালোবাজারিরা নিয়ে যায়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দ্রুত যেন এই কালোবাজারি টিকেট  কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং বাংলাদেশ রেল কে তাদের হাত থেকে মুক্ত করে রেলপথ যাত্রাকে আরও সুন্দর করার।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন সূত্র জানায়, শ্রীমঙ্গল-ঢাকাগামী চারটি এবং শ্রীমঙ্গল-চট্টগ্রামগামী দুটিসহ মোট ছয়টি আন্তনগর ট্রেন প্রতিদিন যাতায়াত করে। সেগুলো হলো ঢাকাগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ও উদয়ন এক্সপ্রেস।
সূত্র আরও জানায়, শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকা পর্যন্ত জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য বরাদ্দকৃত টিকিটের সংখ্যা মাত্র ৮০টি, পারাবত এক্সপ্রেস ১১০টি, কালনী এক্সপ্রেসে ৮১টি, উপবন এক্সপ্রেসে ৬৫টি। এ ছাড়া চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য ৬২টি ও উদয়ন এক্সপ্রেসে ৪৫টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ তুলে বলেন, স্টেশনের কর্মকর্তারা তাদের আত্মীয়স্বজন ও সিনিয়র সচিব পর্যায়ে ক্ষমতা প্রয়োগ করে বছরের পর বছর শ্রীমঙ্গলে চাকরি করে যাচ্ছেন এবং বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। বছরের পর বছর একই লোক চাকুরির বহাল। কর্মকর্তাদের রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট শ্রীমঙ্গল স্টেশনের দুই-তিনজন লোক টিকিট কেটে নিয়ে যায়। তারা টিকিট কালোবাজারি করে এবং রেলওয়ের কিছু কর্মচারী এই টিকিট চুরির সাথে জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গলে রেলস্টেশনে যাত্রী সামিয়া সুমা অভিযোগ করে বলেন কেউ মুল যায়গাটি চিহ্নিত করতে পারছে না যাত্রীরা দেখতে পাচ্ছেন যে কালোবাজারি হচ্ছে, কিন্তু টিকিটগুলো কিভাবে তাদের হাতে যাচ্ছে, সেই মূল জায়গাটা চিহ্নিত করতে পারছেন না কেউ। মূল জায়গায় আঘাত না করে কেবল কালোবাজারি ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে, বদলি পর্যন্ত হয় না শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশনের কর্মকর্তা ও এমনকি কর্মচারী কাউকে। দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনে থাকার কারণে অনেকে জানেন যে কার মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারির কাছে যাচ্ছে।
ঢাকার এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, আজকে আসছি কালকে আমি ঢাকা যাব টিকেট নেওয়া জন্য। কাউন্টারে পাই নাই। এখানে যদি ৫ দিনে আগে টিকেট না পাওয়া যায়, তাহলে এখানে কাউন্টার বসিয়ে লাভ কি। কি ভাবে টিকেট গুলো যাচ্ছে আমরা জানি না। কিন্তু স্টেশন থেকে অল্প দূরেই টিকিট কালোবাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে রেলওয়ে থানা, অফিসার ইনচার্জ কামরুল ইসলাম তালুকদার বলেন আমাদের আসলে দ্বায়িত্ব হয়েছে রেলপথে যাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়া এবং তার পাশাপাশি রেলওয়ের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। টিকেট কালো বাজারের বিষয়ে আমার কাছে এখন পযন্ত কোনো অভিযোগ আসে নি। তবে আমরা এ ব্যাপারে, যেহেতু একটা স্টেশন রয়েছে সবগুলোতেই আমাদের তৎপরতা রয়েছে। রকম যদি পাওয়া যায়, সাথে সাথে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখানে কালো বাজার বলতে কোনো টিকেট নেই। এখানে টিকেট অনলাইনে কাটা হয়। যাদের এনআইডি কার্ড আছে, তারাই টিকেট কাটতে পারবে এবং ভ্রমণ করতে পারবে। এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে টিকেট কাটার পর ভ্রমণ করে এটার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে চেকিং প্রক্রিয়া এবং জরিমানা বিদ্যমান রয়েছে। যদি বাইরে টিকেট বিক্রি হয়, সেই জায়গায় ত আমরা দ্বায়ী নই। এবং কালো বাজারের বিরুদ্ধে আমাদের রেলওয়ে প্রশাসন পুলিশ,অভিযান পরিচালনা করেন। টিকিট কালোবাজারি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!