ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫

খাদ্য গুদামে বদলি বাণিজ্য: কোটি টাকার ঘুষে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য

নেত্রকোণা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ০৪:৫৮ পিএম

খাদ্য গুদামে বদলি বাণিজ্য: কোটি টাকার ঘুষে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য

ছবি সংগৃহীত

আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুল আলম

ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার সরকারি খাদ্য গুদামগুলোতে চলছে প্রকাশ্য বদলি বাণিজ্য। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ‘পারিবারিক সমস্যা’ দেখিয়ে প্রত্যাহারের আবেদন করিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপর মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে অন্যদের পদায়ন করা হচ্ছে।
সম্প্রতি অন্তত ছয়টি গুদামের কর্মকর্তাদের এভাবে বদলি ও পদায়নের তথ্য পাওয়া গেছে।

অভিযোগ উঠেছে—ময়মনসিংহ আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে গঠিত একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এই বদলি বাণিজ্যের মূল হোতা। পুরো প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করছেন খাদ্য পরিদর্শক মো. মাজহারুল ইসলাম কামাল।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া সদর খাদ্য গুদামে সম্প্রতি মেয়াদ শেষ না হতেই বিধি বহির্ভূতভাবে একজন উপ-পরিদর্শককে পদায়ন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী সেখানে পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা থাকার কথা। অভিযোগ ওঠার পর ওই পদায়ন আদেশ পরে বাতিল করা হয়।

এদিকে নেত্রকোনা সদর, ঠাকুরাকোনা, ময়মনসিংহের 
গৌরীপুর, তারাকান্দা, ধলা, ও শ্যামগঞ্জ গুদামে দেখা গেছে—দুই বছর পূর্ণের আগেই কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বদলি করা হয়েছে, এবং তাৎক্ষণিকভাবে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারাকান্দা গুদামের কর্মকর্তা মো. আলাল হোসেনকে গত ১৯ আগস্ট  মেয়াদ পূর্ণের দুই মাস আগেই বদলি করে প্রথমে ফুলবাড়িয়া ও পরে গৌরীপুর খাদ্য গুদামে পদায়ন করা হয়।  ১৭ দিনের ব্যবধানে তাকে দুই দফা বদলি করা হয়। গত ২২ অক্টোবর নেত্রকোনার সদর গুদামের কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। একইভাবে মেয়াদ শেষের আগেই গুদামের অন্য কর্মকর্তাদেরও চাপ দিয়ে পারিবারিক সমস্যার আবেদন লিখে নিয়ে বদলি জরা হয়েছে। পরে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে তাদের জায়গায় অন্য কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়েছে।


খাদ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস থেকে চাপ দিয়ে পারিবারিক সমস্যার আবেদন করতে বলা হয়েছে। ঊর্ধ্বতনের কথা না মানলে সমস্যায় পড়তে হবে। তাই সবাই বাধ্য হয়ে আবেদন করেছে। বদলি বাণিজ্যে এখন প্রতি পদায়নে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হচ্ছে। টাকা না দিলে গুদামের দায়িত্বও দেওয়া হচ্ছে না।

তারা বলেন, “একসাথে এতজন কর্মকর্তাকে পারিবারিক সমস্যা দেখিয়ে প্রত্যাহার করা এবং ঘুষে নতুনদের বসানো—এর আগে কখনো এমন অনিয়ম দেখা যায়নি।”


এ বিষয়ে খাদ্য পরিদর্শক মো. মাজহারুল ইসলাম কামাল বলেন, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্যারকে কল দিয়েছিলেন, সাংবাদিক কল দিয়েছিলো এটা তিনি আমাকে জানিয়েছেন। স্যার মূলত সচরাচর কারো কল ধরেন না। আমি নিজেই এক সময় সাংবাদিক ছিলাম। অভিযোগের বিষয়টা মিথ্যা। ঠাকুরাকোনা গুদামের কর্মকর্তা শামীম তার এক বন্ধুকে এখানে দিয়ে সময়কাল শেষ হওয়ার আগেই তিনি স্বেচ্ছায় আবেদন করে চলে গেছেন। অন্যগুলোও প্রায় একই রকম। কয়েকজন অহেতুক আমাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করে যাচ্ছে। সোর্স লাগিয়ে তাদের খুঁজে বের করতে সম লাগবে না।

ময়মনসিংহ আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) আশরাফুল আলমের ব্যবহৃত মোবাইফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে কল দেখে তিনি এ বিষয়টি তাঁর অনিয়মের সহযোগী পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম কামালকে জানিয়ে রাখেন।

এ বিষয়ে জানতে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীরের মোবাইলফোনে কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে খাদ্য সচিব মাসুদুল হাসান বলেন, আমাদের খাদ্য অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা দুই বছর একটি স্টেশনে থাকবেন। যদি কোন তার বিরুদ্ধে কোন অনিয়ম-দুর্নীতি না থাকে তাহলে তাকে বদলি করার নিয়ম নেই। আর এক সাথে তো এত কর্মকর্তার পারিবারিক সমস্যা হতে পারে না। বিষয়টা তদন্ত করে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!