ঢাকা বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

প্রকৃতির রুদ্ররূপে নতি নয়, অভিযোজনেই আশার আলো হাওরের কৃষকের

নেত্রকোণা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৫, ০৭:১৬ পিএম

প্রকৃতির রুদ্ররূপে নতি নয়, অভিযোজনেই আশার আলো হাওরের কৃষকের

ছবি: বর্তমান বাংলাদেশ।

 নেত্রকোনার মদনে ‍‍`হাওরের জনমানুষের স্থানীয় অভিযোজন বিষয়ক ইউনিয়ন পরিকল্পনা কর্মশালা‍‍` অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বুধবার দুপুরে মদন উপজেলায় এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে খরা, আগাম বন্যা, পাহাড়ি ঢল, অতিবৃষ্টি, বজ্রপাত, শৈতপ্রবাহ ও ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে হাওরাঞ্চলের কৃষকজীবন এখন এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি, ফসলের দাম কমে যাওয়া, পোকার আক্রমণ, সেচ ও বীজ সংকটের মতো চিরচেনা সমস্যাগুলো। এসব সংকট মোকাবেলায় স্থানীয় অভিযোজন কৌশল নির্ভর কৃষিপদ্ধতির বিকল্প নেই—এমন উপলব্ধি থেকেই  “হাওরের জনমানুষের স্থানীয় অভিযোজন বিষয়ক ইউনিয়ন পরিকল্পনা কর্মশালা” অনুষ্ঠিত হয়।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক (Bangladesh Resource Center for Indigenous Knowledge) ও দাতা সংস্থা অক্সফামের সহযোগিতায় আয়োজিত এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন গোবিন্দশ্রী ইউনিয়ন ও মদন ইউনিয়নের কুলিয়াটি, উচিতপুর, পশ্চিমপাড়া, বারঘরিয়া, ভূইয়াহাটি ও খালাসিপাড়া গ্রামের ১৯ জন কৃষক-কৃষানি। কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ভিক্ষু মিয়া, উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী, এবং প্রশিক্ষক হিসেবে বারসিকের সহযোগী সমন্বয়কারী শংকর ম্রং ও আ. রব।

কৃষানি মিনারা আক্তারের সভাপতিত্বে শুরু হওয়া এ কর্মশালায় কৃষক-কৃষানিরা হাওরাঞ্চলের বহুমাত্রিক সংকট তুলে ধরেন এবং এসব সমস্যা মোকাবেলায় তাদের লোকায়ত জ্ঞানভিত্তিক অভিযোজন কৌশল উপস্থাপন করেন।

তারা জানান, আগাম বন্যা ও ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ফসলের ক্ষতি, স্থানীয় বীজের অভাব, বর্ষাকালে সবজি উৎপাদনে বাজারনির্ভরতা, ঘনকুয়াশা ও তাপদাহে ফসল নষ্ট হওয়া, ফসলের রোগবালাই, পোকার আক্রমণ, সেচ সংকট, বিষের অতিরিক্ত ব্যবহার ও চারণভূমির অভাব—এসব সমস্যা এখন হাওরবাসীর জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে তারা যে অভিযোজন কৌশল নির্ধারণ করেন তা হলো—

ডোবায় পানি সংরক্ষণ করে চৈত্র-বৈশাখ মাসে সেচের কাজে ব্যবহার করা।

রাসায়নিক সারের পরিবর্তে গোবর ও কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করা।

রোগবালাই দমনে জৈব বালাইনাশক তৈরি ও প্রয়োগ করা।

বসতভিটা রক্ষায় বাড়ির চারপাশে ভেন্না, উজাউরি, মুর্তা, কুচুরিপানা ও হিজল-করচ গাছ রোপণ করা।

স্থানীয়ভাবে সবজির বীজ সংরক্ষণ করে রাখার উদ্যোগ নেওয়া।

বর্ষাকালে সবজি চাষে বস্তাপদ্ধতি, টাওয়ার পদ্ধতি ও ঘরের চাল ব্যবহার করা।

স্থানান্তর পদ্ধতিতে চারার বীজতলা তৈরি করা।


দুই দলে বিভক্ত হয়ে অংশগ্রহণকারীরা তাদের অভিযোজন পরিকল্পনা লিখিতভাবে উপস্থাপন করেন। কর্মশালার শেষে কৃষক-কৃষানিরা নিজ নিজ বাড়িতে কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা চর্চা ও স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে জলবায়ুগত ঝুঁকি মোকাবেলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হাওরাঞ্চলের এই ধরনের স্থানীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ভবিষ্যতে জলবায়ু সহনশীল কৃষি ব্যবস্থার দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!