নীলফামারীর ডোমারে মাত্র দশ মাসে প্রায় ৬৮ লাখ টাকার জমি কেনার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা উচ্চ মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার সাফিউল ইসলামের বিরুদ্ধে। জমি কেনাবেচায় অনিয়ম, জালিয়াতি এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জমি ক্রয়ের চেষ্টার অভিযোগ এনেছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। এ ঘটনায় দ্রুত তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সকালে ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শায়লা সাঈদ তন্বীর বরাবর দেওয়া লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগীরা এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাফিউল ইসলাম গত কয়েক বছরে ডোমার পৌরসভার বড় রাউতা মাদ্রাসাপাড়া এলাকায় বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কিনেছেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি সাড়ে পাঁচ বিঘার বেশি জমি কিনেছেন। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ১০ মাসে তিনি ৪ বিঘা ৮ শতাংশ জমি কিনেছেন, যার দলিলে উল্লেখিত মূল্য প্রায় ৬৮ লাখ টাকা।
ভুক্তভোগীদের দাবি, জমির প্রকৃত বাজারমূল্যের তুলনায় দলিলে উল্লেখিত মূল্য অনেক কম, যা জালিয়াতির আশঙ্কা তৈরি করেছে। জমি ক্রয়ে নানা কৌশল অবলম্বন করে দলিলে ইচ্ছামতো মাপ ও মূল্য দেখিয়ে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
বড় রাউতা মাদ্রাসাপাড়ার মৃত নজমল হকের ছেলে মো. আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করেন, তিনি ২০২১ সালে দেড় শতক জমি বিক্রি করেন। কিন্তু সাফিউল ইসলাম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সেই জমি দলিলে আড়াই শতক দেখিয়েছেন। জমির মালিক দেড় শতক জমির প্রতি শতক ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন, অথচ জালিয়তির মাধ্যমে নেয়া জমির দলিলে আড়াই শতকের দাম উল্লেখ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।
তিনি অভিযোগ করেন, সাফিউল আওয়ামীলীগে রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে এবং নানা কৌশলে নিজের পাশের জমি জোরপূর্বক ক্রয়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিএস তার বন্ধু পরিচয়ে নানান হুমকি প্রদান করেন ভুক্তভোগীদের।
স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম ও মো. আল আমিন অভিযোগ করেন, সাফিউল প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করছেন। পাশের জমির মালিকদের হেনস্তা করছেন এবং এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করছেন। একজন ক্ষুদ্র চাকরিজীবী হয়েও তিনি কীভাবে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তা খতিয়ে দেখা জরুরি বলে দাবি তাদের।
মাদ্রাসাপাড়ার মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে আবু কালাম জানান জমি নিয়ে বিরোধের জেরে টাকা ও জমি দেয়ার লোভ দেখিয়ে আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে মামলার সাক্ষী হতে বলেছে। মামলার সাক্ষী হতে রাজী না হলে পরবর্তীতে হুমকি দিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে সাফিউল ইসলাম জানান, তার বিরুদ্ধে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করছে। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আমি ইতিপূর্বে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে ডোমার সাব-রেজিস্ট্রার সিরাজুল ইসলাম বলেন, জমি বিক্রির তথ্য গোপন করা এক ধরনের অপরাধ। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শায়লা সাঈদ তন্বী বলেন, আমরা একাডেমিক সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :