মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে গত দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে জেলার মনু, কুশিয়ারা, ধলাই ও জুড়ী প্রধান ৪ টি নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত কয়েকদিন থেকে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। টানা বৃষ্টির ফলে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। এতে বাড়ছে কাওয়াদিঘি হাওর ও হাকালুকি হাওরের পানিও। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে বেড়েছে নদ-নদী এবং খাল-বিলের পানি। এমন অবস্থায় তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকদের শত শত হেক্টর জমির রোপা আমন ধান। ডুবে যাচ্ছে সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের খেত।
এছাড়া অবিরাম বর্ষণে জেলা সদরের খাইঞ্জার হাওর, বিন্নার হাওর, হাইল হাওর সহ ছোট বড় হাওর আর খালবিল এখন বৃষ্টির পানিতে টইটম্বুর। এতে তলিয়ে গেছে কৃষকের ঘামে সদ্য রোপণ করা শতশত হেক্টর রোপা-আমন। চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকদের মাঝে । বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া রোপা-আমণ নষ্ট হওয়ায় আতঙ্কে কৃষকরা।দুশ্চিন্তায় রাত কাটাছেন কৃষক।
গত শুক্রবার থেকে কিছুটা থেমে থেমে শুরু হয় বৃষ্টি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলাজুড়ে টানা বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জেলায় কি পরিমাণ রোপা-আমণ পানিতে তলিয়ে গেছে তা নিরূপণ করাও বেশ কঠিন।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর মৌলভীবাজার জেলায় ৯৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮০ হাজার হেক্টরে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
কৃষকরা বলছেন, এভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হতে থাকলে জমির ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।
এনামুল হক নামে আরেক ধানচাষি বলেন, ‘এবার যেভাবে ধানের ফলন দেখা যাচ্ছে, তাতে আমাদের মন আনন্দে ভরে গেছে। প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ মণ ধান পাওয়ার আশা করছি। তবে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ধান ঘরে তোলা নিয়ে অনেকটা চিন্তায় আছি। এ অবস্থায় মহান আল্লাহ্ যদি আমাদের ধান খেত রক্ষা না করেন, তাহলে ঘরে বসে যাবো। সারা বছর একরকম না খেয়ে থাকতে হবে।’
সবুজ মুন্সী নামে এক সবজিচাষি বলেন, ‘আমি কিছু জমিতে মরিচ, বেগুন ও লাউ চাষ করেছি। তবে টানা বৃষ্টির কারণে আমার সবজি খেত তলিয়ে গেছে। আর কিছুদিন যদি খেতে পানি জমে থাকে, তাহলে সব সবজি গাছ পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এতে আমার অনেক ক্ষতি হবে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ৩ টা পর্যন্ত গত দুদিনে টানা ৫৭ ঘন্টার বৃষ্টিপাতে সর্বমোট ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জালাল উদ্দীন বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকদের সাময়িক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি কমে গেলে ফসলের চূড়ান্ত কোনো ক্ষতি হবে না। আমরা কৃষকদের নালা কেটে পানি বের করে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন ওয়ালিদ বলেন জেলা জুড়ে টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় জেলার ৪ টি নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান পানি বৃদ্ধি পেলেও বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :