ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেউ, অবাধে চলছে পলিথিনের ব্যবহার

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২৫, ১২:০৩ পিএম

নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেউ, অবাধে চলছে পলিথিনের ব্যবহার

 নজরদারি না থাকায় নিষিদ্ধ সত্ত্বেও মৌলভীবাজার জেলা ও উপজেলার বাজারে পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার হচ্ছে। ফলে চরম হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। এই নিষিদ্ধ পলিথিনের জমজমাট ব্যবসা চলছে এখন মৌলভীবাজারের। পলিথিন ব্যাগ প্রতিদিন খোলা দোকান ও ফুটপাতের হকারদের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে অবাধে। ব্যবহৃত ওইসব পলিথিনের আশ্রয়স্থল হচ্ছে ময়লার ভাগাড় ও জলাশয়। খালি হাতে বাজারে যেয়ে, পলিথিন ব্যাগ ভর্তি জিনিস নিয়ে বাড়ি ফিরছেন কেউ, কেউ। এ দৃশ্য বলার মতো না। কিছু দিন পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের দাবিতে তোর জোর হলেও বর্তমানে আর সেই অভিযোগ দেখা যাচ্ছে না। প্রতিদিন নিষিদ্ধ পলিথিন ক্রয়-বিক্রয় হলেও কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নীরব থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
সরেজমিন বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মুদি দোকান, কাঁচাবাজার, মাছের বাজারসহ সর্বত্রই নিষিদ্ধ ছোট, বড়, মাঝারি পলিথিন ব্যাগের ছড়াছড়ি। এর মধ্যে রয়েছে হাতলসহ ও হাতল ছাড়া পলিথিন ব্যাগ। প্রকাশ্যেই আইন ভঙ্গ করে ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীরা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছেন। বিভিন্ন অভিজাত শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাত ও বিপণিবিতাণগুলোতেও প্রচলিত আইনকে তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে পলিথিন ব্যবহার করে চলেছেন সংশ্লিষ্টরা। 
জানা যায়, বাংলাদেশে ১৯৮২ সালে প্রথম পলিথিন ব্যাগের বাজারজাত ও ব্যবহার শুরু হয়। এটি সহজে পরিবহন ও স্বল্প মূল্যে পাওয়ার কারণে অল্প সময়ে মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে যায়। কিন্তু ব্যবহারের পর এটি যত্রতত্র ফেলার কারণে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটায় এবং এটি ক্ষতিকারক পণ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়। পরিবেশ বাঁচাতে সরকার ২০০১ সালে পলিথিন নিষিদ্ধ করলে সাধারণ মানুষ সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে দোকান থেকে পলিথিন জব্দ করা হয়েছে, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কারখানা। কিন্তু পলিথিনের ব্যবসা বা ব্যবহার বন্ধ হয়নি। পলিথিন বন্ধের লক্ষ্যে ২০০২ সালে তৎকালীন সরকার পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাত, ক্রয়-বিক্রয়, প্রদর্শন, মজুদ ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে। 
স্থানীয় ব্যবসায়ী এমদাদুর রহমান বলেন, প্রায় সব দোকানেই ক্রেতাদের পলিথিনে করে মাল দেওয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিক্রেতারা সহজে এগুলো পেয়ে যায়।"
এক বিক্রেতা বলেন, এটাই তো আমাদের ব্যবসা, আমরা কী করব? যেসব মাল স্টকে আছে সেগুলো তো আগে শেষ করতে হবে। এরপর পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা একজন বলেন, ‘সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এটা কতটুকু কার্যকর হবে সেই প্রশ্ন এসে যায়। এর আগে অনেক সরকার পলিথিন বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু আবারও পলিথিন বাজারে এসে গেছে। কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ না করলে আবারও পলিথিন ফিরে আসবে। এ ক্ষেত্রে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।
মৌলভীবাজার টিসিবি মার্কেটের এক দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "আমরা বাজার থেকে পাইকারি দামে পলিথিন কিনি। ক্রেতারা কাগজের ব্যাগ নিতে চায় না, তাই বাধ্য হয়ে পলিথিন ব্যবহার করি।"
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাঈদুল ইসলাম বলেন, "আমরা বাজারে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। তবে বিক্রেতারা কৌশলে এসব পলিথিন লুকিয়ে রাখে। শিগগিরই  বাজারে গুলোতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে।"
সচেতন মহল মনে করছে, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, জরিমানা ও বিকল্প পরিবেশবান্ধব ব্যাগ সরবরাহ নিশ্চিত করা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

 

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!