ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
(একসাথে দুই স্কুলে ভর্তি)

অনুপস্থিত থাকলেও উপবৃত্তি পাচ্ছেন শিক্ষার্থী; জানাজানির পর ১ম থেকে নামিয়ে দেওয়া হলো ১৯ এ

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ০৯:২৪ পিএম

অনুপস্থিত থাকলেও উপবৃত্তি পাচ্ছেন শিক্ষার্থী; জানাজানির পর ১ম থেকে নামিয়ে দেওয়া হলো ১৯ এ

ছবি: বর্তমান বাংলাদেশ।

সরকারি স্কুলে অনুপস্থিত থাকলেও উপস্থিতি দেখিয়ে এক ছাত্রীকে উপবৃত্তির সুবিধা দিচ্ছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজমা পারভীন।

অভিযোগ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজশে ওই প্রধান শিক্ষিকা বছরের পর বছর এই অনিয়ম করে যাচ্ছে।  

ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপবৃত্তি পাওয়া ওই শিক্ষার্থী একই সাথে দুই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি। সে সরকারি এই বিদ্যালয়ের পাশাপাশি ভান্ডারপুর আলফা কেজি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। এবং সেখানেই নিয়মিত উপস্থিতি তার।

অথচ সরকারি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও সরকারি সুবিধা উপবৃত্তি পাইয়ে দেওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে এলাকাজুড়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৫ম শ্রেনীর ওই শিক্ষার্থী ভান্ডারপুর আলফা কেজি স্কুলে শিশু থেকে পড়াশুনা করছে। ২০২৩ সালে ৩য় শ্রেনীতে উঠার পর প্রধান শিক্ষিকা নাজমা পারভীনের সহযোগিতায় বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয় ওই শিক্ষার্থী। ভর্তি হলেও বিদ্যালয়ে আসতো না ওই শিক্ষার্থী। শুধুমাত্র পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করত।

এদিকে বিদ্যালয়ে না আসলেও প্রধান শিক্ষিকা নাজমা পারভীন ক্লাস শিক্ষকদের দিয়ে নিয়মিত হাজিরা তুলে দিয়ে উপবৃত্তি পাইয়ে দিতেন। এভাবে ৩য় শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ওই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও বৃত্তি পাচ্ছে ভান্ডারপুর আলফা কেজি স্কুলের নিয়মিত ওই ছাত্রী।

অপরদিকে ওই শিক্ষার্থী চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ১৯৭৫ নাম্বার পেয়ে ক্লাসে ফার্স্ট হয়। বিদ্যালয়ে নিয়মিত না আসার বিষয়টি আলোচনা শুরু হলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমিরুল ইসলামের সাথে আলোচনা করে ৫ম শ্রেণিতে ওই শিক্ষার্থীর ১৯ রোল নম্বরে উত্তীর্ন দেখায়। আর ১৭৬০ পাওয়া অন্য এক শিক্ষার্থীকে ১নং রোল দেখায়।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা বলছেন, একই সাথে সরকারি বিদ্যালয় ও বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনে নাম লিখিয়েছে এই শিক্ষার্থী। কিন্ডারগার্টেন এ নিয়মিত স্কুল করলেও বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না গিয়ে শুধুমাত্র পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। সঠিক তদারকি না থাকায় এ ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটছে ঘটনা ঘটছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষের কঠোর হওয়া প্রয়োজন।

এ ব্যপারে ওই শিক্ষার্থী জানায় , আমি পারিচা এলাকায় নানার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করি। দিপু স্যারের স্কুলে প্লে থেকে পড়ছি। আর কোন স্কুলে ভর্তি আছো কি না জানতে চাইলে, বালুপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির কথা স্বীকার করে বলে সেখানে যাই না, ক্লাসও করি না।

আলফা কেজি স্কুলের পরিচালক দিপু মোবাইলে জানান, সে এখানে অনেক আগে থেকে পড়ছে এবং এক শিক্ষিকা জানান, আলেফা প্লে থেকে এই প্রতিষ্ঠানে পড়ছে। প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন আসে। তার রোল নম্বর ১।

সোমবার বিকেলে জানতে চাইলে পরিচয় পাওয়া মাত্রই ফোনের সংযোগ কেটে দেন বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজমা পারভীন।

তবে এর আগে শিক্ষিকা নাজমা পারভীন গণমাধ্যমকর্মীকে বলেন, ওই শিক্ষার্থী রেগুলার স্কুলে আসতো না। খোঁজ নিয়ে দেখি সে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তখন তার মাকে জানানো হয় এক সাথে দুটো স্কুলে চালানো সম্ভব নয়। এবং যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠানে রাখতে বলি। তার মা ট্রান্সফার করে দিতে বললে আমি ট্রান্সফার করে দিতে চাইছি। কিন্তু অনলাইনে ট্রান্সফার অপশন পাইনি তাই ট্রান্সফার করি নি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার জানান, একজন শিক্ষার্থী একসাথে দুই প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করতে পারে না। এটি নিয়মবিরোধী। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!