ঢাকা সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রাজনগরে বরাদ্দের ৯৪ শতাংশ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ইউএনও বিরুদ্ধে

মনজু বিজয় চৌধুরী,মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ০৫:১৬ পিএম

রাজনগরে বরাদ্দের ৯৪ শতাংশ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ইউএনও বিরুদ্ধে

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা’র দুর্নীতির কাছে রূপকথার গল্প হার মানিয়েছে। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করে বরাদ্দের ৯৪ শতাংশ অর্থই আত্মসাৎ করেছেন। অনুসন্ধানে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
জানা যায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর সারা দেশে আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস চারা ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরিবেশ ও মাটির ক্ষতি করে এমন গাছ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় সরকারি উদ্যোগে এসব চারা উৎপাদন, রোপণ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে সরকার। সরকারি নির্দেশনার আলোকে মৌলভীবাজারের রাজনগর ও বড়লেখা উপজেলায় এ কার্যক্রম শুরু হয়। 
সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা খাতে আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস চারা ধ্বংস করতে নার্সারি মালিকদের ক্ষতিপূরণ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ৫ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে মৌলভীবাজার। এর মধ্যে রাজনগর উপজেলায় ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৫’শ চারা ধ্বংস করতে ৫ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা এবং বড়লেখা উপজেলায় ১৫’শ চারা ধ্বংস করতে ৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন জেলা প্রশাসক। এ বরাদ্দে অস্বাভাবিক দুর্নীতি করেছেন প্রকল্প সভাপতি রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা। এদিকে জেলার সব চেয়ে ছোট উপজেলা রাজনগর। অন্যান্য উপজেলার চেয়ে কম নার্সারী এ উপজেলায়। তারপরও বরাদ্দের পুরো অর্থ এ উপজেলায় দেয়ায় নার্সারির মালিকদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। বাস্তবায়ন হয়নি সরকারের এ মহতি উদ্যোগ। ৫ লক্ষ ৩৪ হাজারের মধ্যে ৫ লক্ষ ৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে সরকারি নির্দেশনার আলোকে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি ও কৃষি কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটি করা হয়।
সরেজমিন সোমবার দুপুরে রাজনগর উপজেলার কলেজ পয়েন্টে গেলে দেখা যায় একটি গাড়ি থেকে সায়েম নার্সারীতে আকাশমনি গাছ নামানো হচ্ছে। সায়েম নার্সারীর মালিক আব্দুল জব্বার বলেন, “আমার ৬০ হাজার আকাশমনি চারা রয়েছে। আমাকে এক টাকাও দেয়া হয়নি। চারা ধ্বংস করার জন্য আমাকে কেউ বলেননি। উপজেলার সব নার্সারীতে এখনও আকাশমনির চারা রয়েছে”।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার ৫টি নার্সারীকে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১টি চারা’র বিপরীতে নার্সারীর মালিকদের ৪ টাকা করে প্রণোদনা দেয়ার কথা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কৃষি অফিসার নার্সারিতে গিয়ে এসব চারা ধ্বংস করার কথা রয়েছে। রাসেল নার্সারীতে ইউএনও এবং কৃষি কর্মকর্তা  উপস্থিত থেকে কয়েকটি চারা ধ্বংস করেন। রাসেল নার্সারী’র ছবি সোনার বাংলা নার্সারী, বনফুল নার্সারী ও সালাম নার্সারীতে উপস্থিত ছিলেন বলে প্রতিবেদনের সাথে এডিট করে লাগানো হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এমন প্রতারণার কথা শুনে হতবাগ নার্সারীর মালিকরাও।
মাস্টাররোলের তালিকাতে দেখা যায়, টেংরা বাজারে রাসেল নার্সারী’র মালিক মো: শ্যামা মিয়া’কে দেয়া হয়েছে ৪ লক্ষ টাকা অথচ তিনি পেয়েছেন মাত্র ২০ হাজার টাকা। টেংরা পন্ডিত নগরের সোনার বাংলা নার্সারী’র মো: সোনা মিয়া’কে দেয়া হয়েছে ১২ হাজার টাকা অথচ তিনি পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার টাকা, ইমন নার্সারী’র মুহিদ খান’কে দেয়া হয়েছে ৯২ হাজার টাকা অথচ তিনি পেয়েছেন মাত্র ৫ হাজার টাকা, বনফুল নার্সারী’র আবুল কাসেম’কে দেয়া হয়েছে ২৪ হাজার টাকা অথচ তিনি পেয়েছেন মাত্র ২ হাজার টাকা, সালাম নার্সারী’র মো: আব্দুস সালাম’কে দেয়া হয়েছে ৬ হাজার টাকা অথচ ক্ষোভে তিনি টাকাই নেননি।
সালাম নার্সারীর মালিক আব্দুস সালাম বলেন, “ইউএনও আমাদেরকে ডেকে নিয়ে একটা খাম দেন। খামে ২ হাজার টাকা দেখে আমি নেইনি। তখন ইউএনও বলেন এটা আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে দিচ্ছি। এ কাজে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই”।
ইমন নার্সারীর মালিক মুহিদ খান বলেন, “২৫ হাজার চারা নষ্ট করে মাত্র ৫ হাজার টাকা পেয়েছি। ইউএনও নিজ হাতে খামে এটাকা আমাকে দিয়েছেন। আমাদের চেক দেয়া হয়নি”।
রাসেল নার্সারী’র মালিক মো: শ্যামা মিয়া বলেন, “ইউএনও অফিসে নিয়ে অনুপ আমাদেরকে একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। তাদের কথা মতো স্বাক্ষর করি। কাগজে কি লেখা ছিল আমাদের দেখানো হয়নি। পরবর্তীতে ইউএনও মহোদয় নিজ হাতে আমাদের একটি খাম ধরিয়ে বলেন এটা আপনাদের গিফট দিলাম। খামে ২০ হাজার টাকা ছিল“।
রাজনগর নার্সারী মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, “৫ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে আমরা জানতামইনা। আমাদের ৫ জনকে দেয়া হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা। পুরো টাকা না দিলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব“।
এ কমিটির সদস্য সচিব রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, “এ কর্মসূচির পুরো কাজ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের স্টাফ অনুপ করেছে। স্বাক্ষর নিতে আসলে আমি দিয়ে দেই। নার্সারীর মালিকদের নামমাত্র টাকা দেয়া হয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, এর সাথে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটি’র সভাপতি আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, “নার্সারীর মালিকদের একাউন্ট পে চেক দেয়া হয়েছে। এখানে অনিয়ম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নার্সারীর মালিকরাতো বলছে আপনি তাদের নগদ টাকা দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তারা বললেইতো হবে না”। এর বাহিরে কোনো তথ্য জানতে চাইলে কৃষি অফিসে যোগাযোগ করুন বলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।


 

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!