শ্রীমঙ্গলে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি এম ইদ্রিস আলীর উপর সন্ত্রাসী হামলা, অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় শ্রীমঙ্গল থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
শনিবার ১ নভেম্বর সাংবাদিক এম ইদ্রিস আলী বাদী হয়ে এই অভিযোগ দায়ের করেন। মামলায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার শংকরসেনা গ্রামের খালিক মিয়া মিয়ার পুত্র আকিক মিয়া (৩০), শিববাড়ী গ্রামের রুস্তম আলীর পুত্র শের আলী (৩২), শিববাড়ী গ্রামের গোলাপ মিয়ার পুত্র সৈয়দ আলী (২৮), মোকামবাড়ী গ্রামের দুলা মিয়ার পুত্র এলাইছ মিয়া (৩৩) ও শংকরসেনা গ্রামের খালিক মিয়ার পুত্র শফিক মিয়া (৩৮) সহ আরো অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এম ইদ্রিস আলী থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে বলেন- ‘আমি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্বরত আছি। অন্যায়ের প্রতিবাদী সাংবাদিক হিসাবে এলাকায় পরিচিত এবং ফ্যাসিষ্ট স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার আছি, এ কারনে আমার বিরোধী শক্তিরা প্রতিনিয়ত আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ অবস্থায় আমি গত শুক্রবার ৩১ অক্টোবর ঘটনাস্থলে আমার শশুর বাড়িতে রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে তাদের বাড়িতেই একটি কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ি। রাত্র অনুমান সাড়ে ১২ টার দিকে আসামীরা আমার নাম ধরে জোড়ে জোড়ে ডাকতে থাকে, এসময় আমি তাদের ডাকাডাকি শুনিয়া ঘরের ভেতর থেকে তাদের পরিচয় জানতে চাই। আসামীরা ঘরের বাহির থেকে বলতে থাকে আজকে তোকে সাংবাদিকতা ভালো করে শেখাবো, তোর সাংবাদিকতা ভরে দিবো, তুই আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য নষ্ট করেছিস তোকে আমরা অপহরণ করিয়া প্রাণে হত্যা করিব। আমি তাদের কথা শুনিয়া ভীত হয়ে ঘরের ভিতরে বসে থাকাবস্থায় দেশীয় অস্ত্রধারী আসামীরা জোড়পূর্বক ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে অনুপ্রবেশ করে আমাকে টেনে হিছড়ে ঘরের বাহিরে নিয়ে আসে। এসময় তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র দ্বারা আমাকে মারপিট ও কিলঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে আসামীগন আমাকে অপহরণ করার পূর্ব পরিকল্পনায় তাদের হাতে থাকা নতুন সাদা একটি লায়লন রশি দিয়ে আমার কোমড়ে ও হাত বেধে ফেলে। এ পর্যায়ে আসামীরা উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে জোরপূর্বক ধারন ও ধারনকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে আমার মানহানীসহ ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাহিত করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তারা আমাকে তাদের সাথে থাকা ৮/১০ টি মোটরসাইকেল টেনে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় আমার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে আমাকে রক্ষা করেন। পরে অভিযুক্তরা সুযোগ পাইলে পুনরায় আমাকে অপহরণ করিয়া প্রাণে হত্যা করার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমি তাদের ধারনকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখিয়া তাদেরকে সনাক্ত করি।’
অভিযোগে আরো বলা হয়-‘বিগত কিছুদিন পূর্বে আসামীদের বিরুদ্ধে সরকারী ছড়া থেকে বালু লুটের বিষয়ে আমার দেশ পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, তাছাড়াও বিগত ২২ অক্টোবর ছাত্র-জনতার উপর হামলাকারী ৫শ’ ৭০ জন আসামীর জামিন শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশসহ আরো একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করি। এরপর থেকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমার উপর চরমভাবে ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে। আসামীরা বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে সুবিধাভোগী ও নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। আমি যেন তাদের বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে সোচ্চার হতে না পারি এই লক্ষ্যে শ্রীমঙ্গল শহরের স্বৈরাচার সরকারের দোসরদের প্রকাশ্য মদদে ও ইন্ধনে আসামীরা আমাকে পরিকল্পিতভাবে গুম করে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্য অপহরণের চেষ্টা করে’ বলে জানানো হয়।
থানায় অভিযোগ দায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’। সহকারী পুলিশ সুপার- (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) ওয়াহিদুজ্জামান রাজু বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহন করা হচ্ছে-এতে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন :