ঢাকা বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

শ্রীমঙ্গলে উপজেলায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের দুইজন কর্মকর্তা বিরুদ্ধে লাখ টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ

মনজু বিজয় চৌধুরী, মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ০২:৫৭ পিএম

শ্রীমঙ্গলে উপজেলায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের দুইজন কর্মকর্তা বিরুদ্ধে লাখ টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ

ছবি: বর্তমান বাংলাদেশ।

শ্রীমঙ্গলে উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল এর প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা : সাবিনা ইয়াসমিন ও এল এফ এ মোঃ আশিকুর রহমান বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ  উঠেছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা (ভার প্রাপ্ত) গাড়ীর জ্বালানী তেল, ঔষধ,খামারে চিকিৎসা ও ঔষধ দিয়ে টাকা নেন বলে ভোক্তভুগীদের অভিযোগ। 
গত ২০২৪ এ শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রানি সম্পদ দপ্তর ও ভেটিরিনারি হাসপাতালের কর্মকর্তা বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। ডাঃ সাবিনা ইয়াসমিন দ্বায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এল এফ এ মোঃ আশিকুর রহমান    কে সাথে নিয়ে দুর্নীতি বাণিজ্যে জড়িয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন। দুর্নীতির একটা অংশ যায় মনিটরিং অফিসারের পকেটে যাচ্ছে এমন অভিযোগ অনেকের। খমারিদের বরাদ্দ কৃত ঔষধ ফ্রি না দিয়ে পশুর চিকিৎসা করে টাকা নেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডাঃ সাবিনা ইয়াসমিন সরকারি গাড়ী ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। এমনকি এ দুই কর্মকর্তার ভয়ে অফিসে কেহ কথা বলতে সাহস করেনা। 
একটি সূত্রে থেকে জানা যায়, গাড়ীর জ্বালানি বানিজ্য, গাড়ীর মেইনটেইনেন্স খরচ, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর ট্রেনিং বাজেট,অফিস মেইন্টেনেন্স, গরুর ঘর,গরুর ঘরের বরাদ্দ কৃত উপকরন,ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ কৃত গরু, মুরগীর খাবার,গরুর খাবার,হাস পিজি,মুরগী পিজির বরাদ্দ, দুর্নীতি করে টাকা আত্মসাৎ করছেন। কসাই খামারী, পিজি গ্রুপের হাঁস মুরগী টেনিং এ রয়েছে নানা অনিয়ম। ক্ষুদ্র নৃগুষ্টির জন্য গরু বিতরন, ঘর তৈরীর মালামাল, খাদ্য, ঘাসের নগদ বরাদ্ধ সব কিছুতে রয়েছে তার অনিয়ম ও দুর্নীতি। শ্রীমঙ্গল উদনীঘাট, পাতা খাউরি, বৈকন্ঠপুর নামে এলাকার ঠিকানা ও এন আইডি দেখিয়ে এল এফ এ মোঃ আশিকুর রহমান ৩ টি গরু বিতরন দেখিয়েছেন। শ্রীমঙ্গলে এই নামে কোন এলাকা খোঁজে পাওয়া যায়নি। এই ৩ টি বরাদ্ধকৃত গরু ও সরঞ্জাম নিজে আত্নসাৎ করেন।
গাড়ীর জ্বালানী তেলের বিল নিয়ে তার দুর্নীতি চরমে। ২৪ সালের নভেম্বর ডিসেম্বর জ্বালানি তেলের বিল করেন ৩৪ হাজার টাকা। ২৫ সালের জানুয়ারী টু জুন বিল করেন ১ লাখ ৭ হাজার ৫ শত টাকা। গাড়ী মেরামতের বিল ৫০ হাজার টাকা। মবিল বদলানো ২৫ হাজার টাকা। সে সময়ের লক বইয়ে দেখা যায় ৮ মাসে গাড়ী চলেছে ১৮ শত কিলোমিটার। কিন্তু গাড়ী প্রতি মাসে নিন্মতম ৮ শত কিলোমিটার চললে বিল করার নিয়ম রয়েছে। গাড়ী লক বই ড্রাইভার লিখেতে হয়। আর লক বই দেখিয়ে একাউন্ট থেকে বিল তুলতে হয়। ড্রাইভারকে মিথ্যা লক বই লিখার চাপ দিলেও সে না লিখায় তার উপর ক্ষেপেযান বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় খামারীদের গরু মহিসের চিকিৎসা এল এস পি দিয়ে চালিয়ে দেন। তার এই সমস্ত কাজের সহযোগীতায় করেন অফিসের এল এফ এ মোঃ আশিকুর রহমান। 
সরকারি বরাদ্ধকৃত গবাদি পশুর খাদ্য বিক্রি করে দেন। এছাড়াও এল এফ এ মোঃ আশিকুর রহমান শ্রীমঙ্গল সবুজভাগ তার নিজস্ব একটি গরুর ফার্ম ফুফুকে প্রপ্রাইটার দেখিয়ে দপ্তরে প্রণোদনায় প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ঘর নির্মাণ করেন। যে ফার্মটি মুলত ছেলে মেয়ে আদুরি এন্ড আদিফ নেেম।

ভোক্তভুগী ভাড়াউরা চা বাগানের সজিতা সাঁওতাল জানান, শ্রীমঙ্গল প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের একটি গরু পেয়েছি। সাথে টিন, পিলার এগুলো পেয়েছি। এগুলো নিন্ম মানের কাগজের মতো। যদি একবার শিলাবৃষ্টি হয় তাহলে টিন ছিদ্র হয়ে যাবে। পিলারের ভিতরে শুধু বালু আর সামান্য সিমেন্ট। আমরা শুনেছি এই গরুর ঘরের জন্য ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। কিন্তু এখানে ২ হাজার লাগছে কি না,আমাদের সন্দেহ আছে। শ্রীমঙ্গল পানি সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দুনীতি সাথে জড়িত আছে। আমাদেরকে গরুর ঘরের জন্য যেসব আসবাপত্র সকলকে দেওয়া হয়েছে। সকলেরএকই অবস্থা। রতন কর্মকার জানান, আমার আইডি কার্ড নিয়ে শ্রীমঙ্গল পানি অধিদপ্তরে জমা দিয়েছিলাম গরু পাবো বলে। ৬ মাস আগে গরু বরাদ্ধ হয়। কিন্তু গরু অফিসের একজন নিয়ে যায়। আমাকে বলেছে তদন্তে কেউ আসলে বলার জন্য গরু আছে। বিনিময়ে কিছু টাকা তোমাকে দেব। অফিস থেকে তদন্তে একজন এসে জিজ্ঞেস করেছে গরু কই। আমি বলেছি আমার কাছে গরুটি নেই। অফিসে একজন লোক আছে উনার কাছে গরুটি আছে।আমার আইডি কার্ডে নাম রয়েছে খাতার মাঝে।কিন্তু আমি গরু পাই নি।
মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের গাড়ী চালক মোঃ বাবুল মিয়া বলেন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডাঃ সাবিনা ইয়াসমিন দায়িত্ব পেয়ে আমাকে ডেকে এনে বলেন, গাড়িতে স্টিকার লাগানো নেই কেন। আমি বলি টেম্পার শেষ হয়ে যাওয়ায় গাড়ির স্টিকার উঠে গেছে। এই বিষয়ে আমি আমার কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। অফিসের সবাই নাইট গার্ডসহ সরকারি লগ দিয়ে বির্জিটিং কার্ড ব্যবহার করে। স্যার আমার বেতন আটকিয়ে রেখেছেন।
আমাদের গাড়িতে মাইলেস লিখে দেওয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডাঃ সাবিনা ইয়াসমিন চাপ দেন। আমি অসম্মতি জানাই। গাড়ি কম চলছে, জিপিএস লাগানো আছে, তার দায়ভার আমি কেন নেবো। উনারা তেল দিবে আমার শুধু দ্বায়িত্ব আমি গাড়ি চালাবো। তাছাড়া অফিসে আমার আর কোনো কাজ নেই। তিনি আমাকে কল দিয়ে নিয়ে রাতে ১১/১২  টার দিকে খামার সেবা দিতে গিয়েছেন। অফিসের দুর্নীতি, খামারের গরুর ঘর দুর্নীতি, এলএফএ মোহাম্মদ আশিকুর রহমান জড়িত। আমার উপর বিভিন্ন ভাবে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ক্ষমতা বলে যা ইচ্ছা তাই করছেন। 
শ্রীমঙ্গল উপজেলা পানি সম্পদ ও  ভেটেরিনারি হাসপাতাল এর এল এফ এ মোঃ আশিকুর রহমান বলেন, আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দেইনা। এসব বিষয়ে আমি এতটা দক্ষ নই। আর আমি তো ঠিকাদার নয়। এই কাজ গুলো গ্রুপের নিদিষ্ট সদস্যরা তারা তাদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেন। এখানে আমাদের অফিসের যে সহযোগিতা এবং স্যারের নির্দেশ মোতাবেক কাজ গুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি হচ্ছে না এ গুলো আমরা তদারকি করি। অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী আমার দায়িত্ব যেটা সেটা আমি পালন করি। অফিসের টাকা ভাগাভাগির বিষয় আমি কিছু জানি না।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা পানি সম্পদ কর্মকর্তা( ভার প্রাপ্ত)ডা: সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ভির্জিটিং কার্ডে সরকারি লগ ব্যবহার করতে পারে না। একজন ব্যবহার করেছিল। তাকে আমরা নিষেধ করেছি। আর ঘরের বিষয় আমরা শুধু উপকরন দেবো। ৪ টা পিলার, টিন, আর একটা ব্যানার। আর উনারা নিয়ে ঘর করবেন। গাড়ীর জন্য শুধু তেলের বরাদ্দ আছে। মবিল বদলানো, গাড়ী মেরামত, ইমারজেন্সি কাজ তেলের টাকার বিল থেকে করতে হয়। গাড়ির মাইসেল ঠিক নেই। আপনি দেখবেন অনেক টাকার তেল ঢোকানোর  পরও কিন্তু গাড়ির মাইলেস খুবই কম দেখাবে। এই সব কিছুতেই ঝামেলা আছে। আমাদের ড্রাইভার লগ বই লেখে। আমার নামে যে অভিযোগ উঠেছে আমি বাইরে রোগী দেখি তা ঠিক নয়। আমরা সরকারি ঔষধ বাইরে নেওয়া সুযোগ নেই। আর আমি যদি ড্রাইভারের বেতন আটকে রাখিনি। আমি তো তার টাইম সিট দিয়েছি।বেতন স্যাররা কেনও তাকে দিচ্ছে না এ বিষয়ে আমি কি জানি। দুনীতি বিষয় প্রশ্ন করলে বলেন, আমি কোনো দুনীতি করিনি। অফিসার যারা থাকবে তারাই দুনীতি করবে। আপনারা এমন মনে করেন খুবই কষ্ট হয়।
এব্যাপারে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: আশরাফুল আলম বলেন, ড্রাইভারকে শোকজ করা হয়েছিল। বেতন দেয় ঢাকা প্রকল্প অফিস, তার বেতন আমরা আটকে রাখিনি। আমি অভিযোগের ভিক্তিতে ওকে শোকজ করি। তাকে  বদলী করা হয়েছে। সে জয়েন্ট করেনি। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা : সাবিনা ইয়াসমিন ও এল এফ এ মোঃ আশিকুর রহমান বিরোদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর এল এফ এ সহ অন্যান্য কর্মচারী মাঠ পর্যায়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারে। বড় ধরনের সমস্যা হলে ডা : সাবিনা ইয়াসমিন চিকিৎসা দেন। ভিজিডিং কার্ডে সরকারী লগো ও ডাক্তার অফিসের মাঠ কর্মীরা ব্যবহার করতে পারবেনা।
 

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!